
ঢাকা:
বেগুনবাড়ি খাল ও হাতিরঝিল জলাভূমিতে অবৈধ ভাবে নির্মিত বাংলাদেশে তৈরি পোশাক মালিক সমিতির ‘বিজিএমইএ ভবন’ অবশেষে ভাঙতেই হচ্ছে। ৫ মার্চ বিজিএমইএর রিভিউ আবেদন সর্বোচ্চ আদালত খারিজ করে দেন। এরপর কার্যালয় সরিয়ে নিতে বিজিএমইএ তিন বছর সময় চাইলে ১২ মার্চ সর্বোচ্চ আদালত ভবন ভাঙতে ছয় মাস সময় দেন। এর আগে গত নভেম্বরে আপিল বিভাগের প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ‘বিজিএমইএ কমপ্লেক্স’ নামের ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে আবেদনকারীকে (বিজিএমইএ) ভাঙতে হবে। এতে ব্যর্থ হলে রায়ের কপি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভাঙতে হবে। তারা ভবনটি ভাঙার খরচ বিজিএমএর কাছ থেকে নেবে।
ভবনটি ভেঙে ফেলার জন্য ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ভাঙার দিনক্ষণ এখনও ঠিক না হলেও ‘কন্ট্রোলড ডিমোলিশন’ বা নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ পদ্ধতিতে ভবনটি ভাঙা হবে বলে রাজউক সূত্রে জানা গেছে।
২০০৮ সালে শ্রমিক দিয়ে হাতুড়ি-শাবল পিটিয়ে সনাতনি পদ্ধতিতে র্যাঙ্গস ভবন ভাঙা হয়েছিলো। এতে ৯ জন শ্রমিক মারা যান। এবার সেরকম দুর্ঘটনা এড়াতে এবার কন্ট্রোলড ডিমোলিশন পদ্ধতি ব্যবহার করবে রাজউক।
জানা গেছে, আদালতের নির্দেশ পেলেই বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ শুরু করবে রাজউক। কন্ট্রোলড ডিমোলিশন পদ্ধতিতে ভবনের বিভিন্ন অংশে বিস্ফোরক স্থাপন করে ভবন ধ্বসানোর কাজ সম্পন্ন করা হয়। এতে ১ মিনিটের মধ্যেই সমস্ত কাজ সম্পন্ন হয়।
কন্ট্রোলড ডিমোলিশন পদ্ধতিতে ভাবন ভাঙার ব্যাপারে বিদেশি একটি বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে ইতিমধ্যেই রাজউকের বোঝাপড়া হয়েছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। চলতি মাসের শুরু থেকে ভবনটি ভাঙার বিষয়ে রাজউকের সঙ্গে হাতিরঝিল প্রকল্পের সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের আলাপ-আলোচনা চলছে। বিজিএমইএর কাছে ভবনের ড্রয়িং-ডিজাইনগুলোও চাওয়া হয়েছে। কোথায় কলাম, কোথায় রড আছে, সেগুলোর অবস্থানের ভিত্তিতে সব ঠিক করা হবে।
সূত্র জানায়, ভবনটি ভাঙার পদ্ধতি নিয়ে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ভবনের পাশে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল। রয়েছে কারওয়ান বাজার, নিউ ইস্কাটন এলাকা। ভাঙার পর চারদিক ধুলায় আচ্ছন্ন হয়ে যাবে। এর পরিবেশগত প্রভাব কতটা বিরূপ হতে পারে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ দল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে।
২০১০ সালের ২ অক্টোবর একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, রাজউকের অনুমতি ছাড়া বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এটি আদালতের দৃষ্টিগোচর করা হলে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। পরে এই মামলার জন্য হাইকোর্ট কয়েকজন অ্যামিকাস কিউরি নিযুক্ত করেন। তাঁরা আদালতে বক্তব্য দেন। জমির মালিকানা না থাকা ও জলাধার আইন লঙ্ঘন করে হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় হাইকোর্ট ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল ভবনটি ভেঙে ফেলতে রায় দেন এবং জলাধার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বলেন।
‘কন্ট্রোলড ডিমোলিশন’ পদ্ধতি কী?
‘কন্ট্রোলড ডিমোলিশন’ ভবন ভাঙার একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। বিশ্বের বিভিন্ন বড় বড় শহর ও জনবহুল এলাকায় ভবন ধ্বসাতে এই পদ্ধতির ব্যবহার হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে ভবনের বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরক বসিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তার আগে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বেষ্টনী দিতে হয়। এ পদ্ধতিতে প্রচুর ধুলা ছাড়ায় বলে আশপাশের পরিবেশগত দিকও বিবেচনায় নিতে হয়।
এ পদ্ধতিতে মাত্র এক মিনিটের মধ্যে যেকোন আয়তনের ভবন ভেঙে ফেলা সম্ভব হয়। সনাতনি পদ্ধতির চেয়ে এ পদ্ধতি নিরাপদ বলে ভবন ভাঙার ক্ষেত্রে দিন দিন কন্ট্রোলড ডিমোলিশন পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
ভিডিওতে দেখুন ‘কন্ট্রোলড ডিমোলিশন’ পদ্ধতিতে ভবন ভাঙার দৃশ্য:
গ্রন্থনা ও সম্পাদনা: প্রণব