
সাইফুল ইসলাম, ঢাকা: আর দশটি গ্রামের মতোই ভরপুর বাড়িঘর রয়েছে। রয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকান-পাট। আছে বহু মানুষের বসবাসও। কিন্তু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে নেই কোন দরজা। ক্ষেত্র বিশেষে দরজা থাকলেও লাগানো হয় না কোন তালা।
খোলা বাড়িঘর ও দোকানপাট রেখে নিশ্চিন্ত মনে চলে যাচ্ছেন এর মালিকেরা। কোন ধরনের নিরাপত্তাহিনতা নেই তাদের মধ্যে। পরস্পরের প্রতি রয়েছে গ্রামবাসীদের অগাধ আস্থা।
ভাবছেন এও কি সম্ভব! বাস্তব পৃথিবীতে এমন কি ভাবে হয়। এটা হতে পারে স্বর্গে। না। আপনার ধারণা ভুল। প্রতিবেশী দেশ ভারতের মহারাষ্ট্রেই রয়েছে এমন গ্রামের অস্তিত্ব। নাম যার শনি শিংনাপুর।
গ্রামবাসীরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা বর্জন করেছেন তাদের শনি’র দেবতার উপর আস্থা রেখে। তাকে গ্রামবাসীরা বিশ্বাস করেন গ্রামের রক্ষক হিসেবে।
কথিত আছে, ৩শ’ বছর আগে তীব্র বৃষ্টি ও বন্যার পর পানাসনালা নদীর তীরে একটি কালো পাথরখণ্ড পাওয়া যায়। গ্রামজুড়ে ঘুরতে থাকে পাথরটি। এক সময় গ্রামবাসী এতে লাঠি দিয়ে স্পর্শ করলে সেখান থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়।
ওই রাতে গ্রামপ্রধান স্বপ্নে দেখেন যে, শনি দেবতা তাকে বলেছে এটা খোদ তার মূর্তি। তিনি আদেশ করেন মূর্তিটি গ্রামের এক স্থানে রেখে দিতে। সেখানে শনি দেবতা বাস করবেন।
তবে শর্ত জুড়ে দেন যে তাকে কোন ধরনের আশ্রয়ের ভেতরে রাখা যাবে না। কারণ বাঁধাবিঘ্ন ছাড়া পুরো গ্রাম তার পর্যবেক্ষণ করা দরকার। গ্রামবাসী সেটা করায় আশির্বাদ করেন শনি দেবতা। একই সাথে যে কোন ধরনের বিপদ থেকে গ্রামকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
পরে গ্রামের মাঝখানে পাথরখণ্ডটি বসিয়ে ঘরবাড়ি ও দোকানপাটের দরজা তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন সবাই। তারপর থেকে এভাবেই চলছে গ্রমাটি। এখনো সেখানকার কোন বাড়ি বা দোকানে দরজা নেই।
মানুষ পরস্পরকে বিশ্বাস করে আস্থার সাথে বাস করছেন। আস্তে আস্তে দেবতার পাথরখণ্ডটিতে গড়ে উঠে ঐতিহাসিক এক মন্দির। রুপকথার মন্দিরটি দেখতে গ্রামটিতে দৈনিক ৪০ হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে থাকে।
যুগ যুগ ধরে ওই গ্রামে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এভাবেই বাস করে আসছে। থাকছে না কোন ঘর বা দোকানের দরজা। দরজা যেখানে নেই, সেখানে তালা থাকার তো প্রশ্নই উঠে না। কুকুর থেকে বাঁচার জন্য মাঝে মাঝে তারা হালকা কাঠ ব্যবহার করেন।
এখন বড় বড় অবকাঠামো গড়ে উঠলেও নিজেদের দরজামুক্ত থাকার ঐতিহ্যে আস্থা রাখছেন তারা। এমনকি বাইরে যেতে ‘আমার ঘরটা দেখবেন’ এমন অনুরোধও কেউ কাউকে করে যান না কেউ।
গ্রামবাসীর প্রত্যাশা তাদের এই ঐতিহ্য টিকে থাকবে যুগ যুগ ধরে। শনি দেবতা তাদেরকে রক্ষা করে যাবেন- যেভাবে করে যাচ্ছেন শতাব্দির পর শতাব্দি। ঘুরে দেখে আসতে পারেন দরজামুক্ত গ্রামটি। সূত্র: বিবিসি।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/এসআই