
ঢাকা:
শত্রু বেষ্টিত ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইলে যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়নি, দেশ স্বাধীনের ৪৫ বছর পর এরচেয়েও ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেন মুক্তিযোদ্ধা মুক্তার আহমেদ মৃধা। যে প্রজন্মের কথা ভেবে হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে লড়েছিলেন ভিনদেশি দখলদারদের বিরুদ্ধে, প্রকাশ্য দিবালোকে সেই প্রজন্মের কয়েকজনের হাতেই লাঞ্চিত হলেন তিনি। নিজের সন্তান ছাড়া তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলো না কেউ। বরং দূর থেকে দাঁড়িয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলো স্বাধীন দেশের ভূমিপুত্ররা। যেন স্বাধীন মানচিত্রে ঘাতকের উল্লাস দৃশ্যের সুনিপুণ মঞ্চায়ন।
কেন আক্রান্ত হলেন মুক্তিযোদ্ধা মুক্তার আহমেদ মৃধা? কাদের প্রশ্রয়ে এ হামলা? এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই নিউজনেক্সটবিডি ডটকমের দুই সংবাদকর্মী প্রীতম সাহা সুদীপ ও তুহিন সাইফুল যান মোহামম্মদপুরের বিডিএম হাসপাতালে। এর ৪১০ নম্বর কক্ষে বিছনায় শুয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন প্রবীন এ মুক্তিযোদ্ধা। কথা হলো তার সাথে।
আপনার শারীরিক অবস্থা এখন কেমন?
পা নিয়ে খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না। হাতটা নিয়েই বেশি সমস্যায় আছি। পরপর তিনবার অপারেশন হয়েছে। বৃহস্পতিবার ডাক্তাররা প্লাস্টার খুলবেন। এরপর বলা যাবে কি অবস্থা। চিকিৎসা খরচ নিজেরাই বহন করছি। যদি সরকারি কোনো সংস্থা সাহায্য করতে এগিয়ে আসতো, তাহলে আমার মতো মানুষ কিছুটা হলেও উপকৃত হতো।
আপনার ওপর এ আক্রমণের কারণ কি?
ই-টেন্ডারের মাধ্যমে আমি একটা টেন্ডার জমা দেই অক্টোবর মাসের ১৭ তারিখে। পরদিন টেন্ডারটা ওপেন হয়। জানতে পারি চারটি রাস্তা সংস্কারের ওই টেন্ডার আমিই পেয়েছি। আমাদের ওখানে একটা টেন্ডার চক্র আছে। বিষয়টি জানতে পেয়ে ওই দিনই স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগের কিছু লোকজনকে দিয়ে তারা আমার ওপর হামলা চালায়।
টেন্ডার চক্রটি কারা নিয়ন্ত্রণ করছে বলে আপনার ধারণা?
ওই চক্রতে রয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, শৈলকূপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোনা শিকদার, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শামীম মোল্লা এবং এমপির এপিএস আব্দুল হাকিম।
এমপি সাহেবের একটা লাইসেন্স আছে জিসান ট্রেডার্স নামে। আর মোল্লা এন্টারপ্রাইজ ভাইস চেয়ারম্যান শামীম মোল্লার, প্রমা এন্টারপ্রাইজ আব্দুল হাকিমের। মূলত ঝিনাইদহ জেলায় এ তিন লাইসেন্সের বাইরে কোনো কাজ হয় না। এদের বাইরে কেউ টেন্ডারও ড্রপ করতে পারে না। এরা যা বলে, তাই করতে হয় স্থানীয়দের। ঝিনাইদহে তাদের কথাই আইন। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে টেন্ডার জমা দেই। ফলাফল হিসেবে তারা আমার এ অবস্থা করলো।
জানা যায় এ হামলার পর একটি মামলা হয়, কিন্তু আসামিরা আদালত থেকে জামিন নিয়ে এখন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মামলা তুলে নেয়ার ব্যপারে আপনাকে কি কোন হুমকি দেয়া হচ্ছে?
একের পর এক হুমকি আসছে। যাদের পুলিশ গ্রেফতার করেছিল, তারা ক্ষমতাসীন প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় জামিনে বেরিয়ে এসেছে। এখন তারা আমাদের হুমকি দিচ্ছে মামলা তুলে নেয়ার জন্য। আমার ছেলে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে, তাকে হুমকি দিচ্ছে— বাড়ি ভেঙে দেব, মেরে ফেলবো, কাজ করতে দেব না। আক্রমণকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় আমাদেরকে অসহায়ের মতো তাদের হুমকি সহ্য করতে হচ্ছে।
আপনার দল ‘আওয়ামী লীগ’ এখন দেশ চালাচ্ছে। দলের সভাপতি অথবা দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার কাছে কি চাওয়া আছে?
আমি বঙ্গবন্ধুর সাথে আওয়ামী লীগে রাজনীতি করেছি, এখন তার কন্যা শেখ হাসিনার সময়ও দলের রাজনীতি করছি। আমি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। বর্তমানে জেলা কমিটির সিনিয়র সদস্য। এছাড়াও আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। সে হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার অনেক দাবি রয়েছে। আমি আশা করবো তিনি আমার চিকিৎসা, হামলাকারীদের বিচারসহ সব কিছুই সুদৃষ্টি দিয়ে দেখবেন। কারণ তিনি রাষ্ট্রের অভিভাবক, আমিও তো এ রাষ্ট্রের একজন নাগরিক। এ রাষ্ট্র গড়ার আমিও তো একজন কারিগর। দেশের জন্য যে হাত দিয়ে যুদ্ধ করেছি, আমার সে হাতটি তারা ভেঙে ফেলেছে। আমি তো অসহায়।
সম্পাদনা: আবু তাহের সরফরাজ