
প্রীতম সাহা সুদীপ, ঢাকা:
মা, মাটি আর মাতৃভাষা এই তিনটি আবেগময় শব্দ বাংলার মানুষের সত্তায় মিশে আছে। হয়তো এ জন্যই পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষা রক্ষার দাবিতে অত বড় আন্দোলন বাঙালি জাতি ছাড়া আর কোনো জাতি করেছে বলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় না।
দাবি ছিল বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার। সেই দাবি এগিয়ে নিতে গিয়ে এ দেশের দামাল ছেলেরা বাংলা ভাষাভাষির রাষ্ট্র বাংলাদেশ আদায় করে ছাড়লেন। বাংলা ভাষা তো বেঁচে রইলোই পর্যায়ক্রমে ভাষা আন্দোলন একটি দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ নিল এবং ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার গৌরব অর্জন করলো।
আর তাই একুশ আমাদের অহংকার, একুশ আমাদের চেতনা। একুশ মানে মাথা নত না করা। একুশ বাঙালির বাঙালি হওয়ার সোপান। একুশ একদিকে যেমন মাতৃভাষার স্বীকৃতি আদায়ে জীবন দেয়ার শোক, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা অর্জনের গৌরব। এই শোক আর প্রাপ্তির গৌরবকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
এরইমধ্যে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়েছে শহীদ বেদি। শহীদদের বুকের তাজা রক্তের প্রতিচ্ছবি হিসেবে রক্তিম লাল রঙে রাঙানো হচ্ছে শহীদ মিনারের পাদদেশ। রঙ এর কাজ শেষ হলেই সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থীরা আলপনা আঁকা শুরু করবে।
এদিকে একুশের চেতনা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে শহীদ মিনার ও এর আশপাশে চলছে দেয়ালচিত্র ও সাজসজ্জার কাজ। তুলে ধরা হচ্ছে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ইতিহাস।

আর একদিন পরেই ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবে জাতি। তাই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাছে দেয়াল লিখনে ব্যস্ত শিল্পীরা। ছবি: নিউজনেক্সটবিডি ডটকম।
ঢাবির চারুকলা অনুষদের ড্রইং এন্ড পেইন্টিং বিভাগের অধ্যাপক মোস্তাফিজুল হক নিউজনেক্সটবিডি ডটকমকে বলেন, ‘দেয়ালচিত্রগুলোতে ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস এবং আগামীতে আমরা কেমন বাংলাদেশ দেখতে চাই এর সব কিছুই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।’
এদিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও এর আশেপাশের এলাকায় চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
রোববার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও এর আশপাশের এলাকায় চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পোশাকে ও সাদা পোশাকে ৮ হাজার পুলিশ নিরাপত্তা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে।’

আর একদিন পরেই ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবে জাতি। তাই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকার নিরাপত্তা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া। ছবি: নিউজনেক্সটবিডি ডটকম।
তিনি বলেন, ‘শহীদ মিনার ও এর আশপাশের এলাকার প্রতিটি ইঞ্চি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা দ্বারা মনিটরিং করা হবে। পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে এ ফুটেজগুলো মনিটর করা হবে। ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বহিরাগত কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। এছাড়া প্রত্যেক দর্শনার্থীকেই আর্চওয়ে গেট দিয়ে প্রবেশ করতে হবে।’
ভিভিআইপি ছাড়া কাউকে দোয়েল চত্বর দিয়ে শহীদ মিনারে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না জানিয়ে ঢাকার পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার এবং কূটনীতিক কোরের সদস্যরা ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মৎস্যভবন হয়ে দোয়েল চত্বর দিয়ে শহীদ মিনারের পথে যাবেন। অন্য সবাইকে পলাশীর মোড় হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সামনে দিয়ে শহীদ মিনারে যেতে হবে।’
সম্পাদনা: সজিব ঘোষ