
সানাউল হক, ঢাকা: ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের ইংরেজী অনুবাদের সুবাদে ১৯১৩ সালে নোবেল পুরষ্কার লাভের পর ১৯১৫ সালের এই দিনে (০৩ জুন) ব্রিটিশ সরকার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সম্মানসূচক ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করে। কথায় আছে, ‘যারে দেখতে নারী, তার চলন বাঁকা’; ভারতবর্ষ শুষে খাওয়া জোঁকরূপী ব্রিটিশ সরকারের এই সম্মাননার কোন প্রয়োজনই হয়তো ছিল না বিশ্বকবির। তাই ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ঘৃনাভরে নাইট উপাধি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি।
ভারতবর্ষ শুষে খাওয়া জোঁকরূপী ব্রিটিশ সরকারের এই সম্মাননার কোন প্রয়োজনই হয়তো ছিল না বিশ্বকবির।
পাঞ্জাবের অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হয়েছিল ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১৩ এপ্রিল। এই হত্যাকাণ্ডের মূল খলনায়ক ছিল ইংরেজ বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডায়ার। তিনি তখন পাঞ্জাবের সামরিক শাসক। ইংরেজবিরোধী আন্দোলন থামাতে পাঞ্জাবে সামরিক শাসন জারি করে ব্রিটিশ শাসক। সামরিক আইনের প্রজ্ঞাপনে চার জনের অধিক লোক একত্রে সমাগম নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু এই আদেশ তেমন ভাবে প্রচারিত হয়নি। ফলে জালিয়ানওয়ালাবাগে সেদিন উপস্থিত হয়েছিল কয়েক হাজার মানুষ।
এদের বেশিরভাগই এসেছিলেন শহরের বাইরে থেকে। কেউ গ্রাম থেকে এসেছিলেন বৈশাখ শুরুর উৎসব উপলক্ষে, কেউ এসেছিলেন ব্রিটিশদের অত্যাচারের প্রতিবাদে ডাকা জনসভায় যোগ দিতে। সামরিক প্রজ্ঞাপন সম্পর্কে বিন্দুমাত্র অবহিত ছিলেন না তারা।
এদের বেশিরভাগই এসেছিলেন শহরের বাইরে থেকে। কেউ গ্রাম থেকে এসেছিলেন বৈশাখ শুরুর উৎসব উপলক্ষে, কেউ এসেছিলেন ব্রিটিশদের অত্যাচারের প্রতিবাদে ডাকা জনসভায় যোগ দিতে। সামরিক প্রজ্ঞাপন সম্পর্কে বিন্দুমাত্র অবহিত ছিলেন না তারা। সমাবেশে আগে থেকে সতর্ক করে না দিয়ে, নিরস্ত্র জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় বৃটিশ বাহিনী। বাহিনীতে ছিল ১০০ জন গুর্খা সৈন্য আর ২টি সাজোয়া গাড়ি। ১০ মিনিটে ১৬৫০ রাউন্ড গুলিতে নিহত হয় প্রায় ২০০০ মানুষ।
এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে চরম ধিক্কার ও ঘৃণা বোধ থেকে প্রকৃত শিল্পীর প্রতিবাদস্বরূপ রবীন্দ্রনাথ ব্রিটিশ সরকার প্রদত্ত নাইটহুড উপাধি ত্যাগ করেন।
এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে চরম ধিক্কার ও ঘৃণা বোধ থেকে প্রকৃত শিল্পীর প্রতিবাদস্বরূপ রবীন্দ্রনাথ ব্রিটিশ সরকার প্রদত্ত নাইটহুড উপাধি ত্যাগ করেন। ভাইসরয় লর্ড চ্যামসফোর্ডকে লেখা চিঠিতে তিনি বলেন, ‘আমাদের বহু কোটি যে ভারতীয় প্রজা অদ্য আকস্মিক আতংকে নির্বাক হইয়াছে, তাহাদের আপত্তিকে বাণী দান করিবার সমস্ত দায়িত্ব এই পত্রযোগে আমি নিজে গ্রহণ করিব।’
উধাম সিং জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিয়েছিলেন একুশ বছর পর; যদিও ব্রিটিশ সরকার তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল।
পরবর্তীতে, ১৯৪০ মার্চ মাসে লন্ডনের ককস্টন হলে অনুষ্ঠিত এক সভায় পাঞ্জাবি যুবক উধাম সিং সামরিক শাসক ডায়ারকে গুলি করে হত্যা করেন। উধাম সিং জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিয়েছিলেন একুশ বছর পর; যদিও ব্রিটিশ সরকার তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল। কিন্তু পৃথিবীর স্বাধীনতাকামী মানুষ উধাম সিংয়ের এই আত্মদান নিতান্তই নিরর্থক এবং মূল্যহীন মনে করে না, করবেও না কখনো। সাথে সাথে কবিগুরুও চিরদিন তার অভিনব প্রতিবাদের জন্য স্মরিত হবেন এ উপমহাদেশের জনগোষ্ঠীর দ্বারা।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/টিএস