
ঢাকা: ব্লগার রাজিব হায়দার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রেদোয়ানুল আজাদ রানাকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। এ সময় তার সহযোগী জঙ্গি আশরাফকেও গ্রেফতার করা হয়।
সোমবার দুপুর ২টার দিকে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একটি দল তাদের গ্রেফতার করে।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান নিউজনেক্সটবিডি ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে উত্তরা থেকে রাজিব হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী রেদোয়ানুল আজাদ ও তার সহযোগী জঙ্গি আশরাফকে গ্রেফতার করা হয়।
২০১৩ সালে ব্লগার রাজীব হায়দার খুন হওয়ার পর তদন্তে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে রেদোয়ানুল আজাদ রানার নাম বেরিয়ে আসে। ওই মামলায় ইতোমধ্যে বিজ্ঞ আদালত (৩১ ডিসেম্বর’১৫) তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন। ফেনীর বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদের ছেলে রানা একসময় ঢাকায় বসুন্ধরা এলাকার আই ব্লকের ১৪৭/সি নম্বর বাসায় থাকতেন। ২০০৫ সালে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে নটর ডেম কলেজে পড়েন রানা। এরপর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হন। ছাত্রাবস্থায় তিনি ছাত্রশিবিরের সদস্য ছিল। এরপর জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে (এবিটি) যুক্ত হন। জঙ্গি সংগঠনটির তাত্ত্বিক নেতা জসীমুদ্দীন রাহমানির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। নিয়মিত ধানমণ্ডিতে একটি মসজিদে জসীমুদ্দীনের বয়ান শুনতে যেতেন রানা।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে শুধু রাজিব হত্যা নয় মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা লেখক অভিজিৎ রায় ও ব্লগার নিলয় নীল হত্যাকাণ্ডেও নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাবেক ছাত্র জড়িত। এই রানার পরামর্শেই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা চিকিৎসকের অ্যাপ্রোন পরে হাসপাতালে ঢুকে চেতনানাশক ইনজেকশন পুশ করে ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল।
উল্লেখ্য ২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলন শুরুর দশম দিনে ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পল্লবীতে নিজের বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ব্লগার রাজিব হায়দারকে। ওই ঘটনায় রাজিবের বাবা ডা. নাজিম উদ্দিনের করা মামলার তদন্তে জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিম এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে উঠে আসে।
মামলার তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ২৮ জানুয়ারি জসীমউদ্দিন রাহমানী ও রেদোয়ানুল আজাদ রানাসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ। ২০১৫ সালের ১৮ মার্চ তাদের সবার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে আদালত।
ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর রাজিব হায়দার হত্যা মামলার রায়ে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পলাতক রেদোয়ানুল আজাদ রানা ও ফয়সাল বিন নাঈম দীপের ফাঁসির রায় দেন আদালত। এছাড়া একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি মো. জসীমউদ্দিন রাহমানীসহ পাঁচজনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজার আদেশ হয়।
প্রতিবেদক: প্রীতম সাহা সুদীপ, সম্পাদনা: জাহিদ