
প্রীতম সাহা সুদীপ, ঢাকা: রামকৃষ্ণ মিশনের ধর্মগুরুকে হত্যার প্রকৃত হুমকিদাতাকে এখনো খুঁজে পায়নি পুলিশ। মিশনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চিঠির বাহককে শনাক্ত করা গেছে। চিঠির প্রেরকের নাম ঠিকানা অনুযায়ী কিশোরগঞ্জ থেকে এ বি সিদ্দিককে খুঁজে বের করে ঢাকায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।
পুলিশ বলছে, কথিত হুমকিদাতা এ বি সিদ্দিকের হাতের লেখার সাথে চিঠির লেখার কোনো মিল পাওয়া যায়নি। তাকে হয়রানি করতেই কেউ তার নাম ব্যবহার করে এ কাজ করেছে। তবে সিসিটিভি ফুটেজে শনাক্ত হওয়া চিঠির বাহককে খুঁজে বের করা গেলেই প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারি জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, রামকৃষ্ণ মিশনে যিনি চিঠিটি ড্রপ করে গেছেন সিসিটিভি ফুটেজে তাকে দেখা গেছে। ওই ব্যক্তিকে হয়তো শিগগিরই আমরা ধরে ফেলতে পারবো। আর তাকে ধরা গেলেই প্রকৃত হুমকিদাতাকে খুঁজে বের করা যাবে।
তিনি বলেন, চিঠিটির নিচে স্বাক্ষর ছিলো আবু বকর সিদ্দিক নামে কিশোরগঞ্জের এক ব্যক্তির। আমরা তাকে খুঁজে বের করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। হাতের লেখাও মিলিয়ে দেখেছি। হুমকিদাতার হাতের লেখার সঙ্গে এ বি সিদ্দিকের হাতের লেখার মিল নেই।
ডিসি নুরুল ইসলাম বলেন, নিরাপত্তা ক্যামেরার ফুটেজের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা গেছে রামকৃষ্ণ মিশনে চিঠি পৌঁছে দেয়া সেই ব্যক্তি আর আবু বকরের চেহারা বা বয়সেরও কোনো মিল নেই। হয়রানি করার জন্যই তার নাম ব্যবহার করে রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান ধর্মগুরুকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।
এ ঘটনার সাথে কোন জঙ্গি সংগঠন জড়িত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি এবি সিদ্দিককে হয়রানি করার জন্য চিঠিটিতে তার নাম ঠিকানা ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাহলে তো উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট। সেটার সাথে জঙ্গি কানেকশন সুযোগ কিন্তু খুবই কম।
কথিত হুমকিদাতা আবু বকর সিদ্দিকি নিউকজনেক্সটবিডি ডটকমকে বলেন, আমি ১৮ বছর সেনাবাহিনীতে চাকরি করেছি। ২০০৪ সালে অবসরে যাই। এরপর ব্যবসা করা শুরু করি। আমাকে হয়রানি করার জন্যই কেউ আমার নামে চিঠিটি পাঠিয়েছে।
কারা এ ঘটনা ঘটাতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার জানা নেই। যেহেতু আমি এলাকায় কয়েকটি ব্যবসার সাথে জড়িত, আমার একটি পেট্রোল পাম্প নির্মাণাধীন। এছাড়া লিজ নেয়া একটি মৎস খামারও রয়েছে। যারা এটা আগে ভোগ দখল করে খেত, কিন্তু এখন পারছেনা সেই শত্রুতা থেকেই হয়তো আমার নাম ব্যবহার করে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
গত ১৫ জুন সন্ধ্যায় রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশন মঠের ধর্মগুরুকে ধর্ম প্রচারে নিষেধ করে চিঠির মাধ্যমে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। এ ঘটনায় মিশনের গুরু মৃদুল মহারাজ ওয়ারি থানায় রাতেই একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। চিঠির উপরের অংশে কম্পিউটার টাইপের মাধ্যমে ‘ইসলামিক স্টেট অব বাংলাদেশ, চান্দনা চৌরাস্তা ঈদগাঁও মার্কেট, গাজীপুর মহানগর’ লেখা রয়েছে। আর খামের ওপরে প্রেরকের ঠিকানায় ‘এ বি সিদ্দিক, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, ধানমন্ডি, ঢাকা লেখা ছিল।
এ ঘটনায় পার্শ্ববর্তী দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করলে রামকৃষ্ণ মিশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। পরে রোববার রামকৃষ্ণ মিশন পরিদর্শন করেন ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। মিশনের নিরাপত্তায় সরকারের নেয়া পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/পিএসএস/জাই