
ঢাকা: একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী সুপ্রিমকোর্টের আপিলের রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করেছেন।
রোববার আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় তার আইনজীবীরা এই আবেদন জমা দেন। রিভিউতে ৬৮ পৃষ্ঠার আবেদনে ১৪টি যুক্তি দেখিয়ে তারা মীর কাসেমকে ফাঁসির দণ্ড থেকে অব্যাহতি চেয়ে রিভিউ আবেদনটি দাখিল করেছেন। দুপুর ১২টার দিকে মীর কাসেমের আইনজীবী মীর আহমেদ বিন কাসেম আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ আবেদনটি দাখিল করেন।
এর আগে ৬জুন দুই শত ৪৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিমকোর্টের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয়। এখন বাকি রয়েছে রিভিউ নিষ্পত্তি এবং রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা। নিয়ম অনুযায়ী দুটি আইনী প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর তার দণ্ড কার্যকর করার উদ্যোগ নেবে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
আইন অনুযায়ী রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করার কথা মীর কাসেম আলীর। সে হিসেবে নির্ধারিত সময়ের এক দিন আগেই তারা রিভিউ(পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেছেন।
পরিবারের সদস্য ও আইনজীবীরা তিনবার কাশিমপুর কারাগারে মীর কাসেম আলীর সাথে দেখা করে রিভিউ আবেদনটি করেছেন। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, নিয়ম অনুযায়ী মীর কাসেম আলী ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ করবেন। রিভিউ করার পর দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে।
৬ জুন দুপুরে রায় প্রকাশের পর সুপ্রিমকোর্ট থেকে রায়ের অনুলিপি বিচারিক আদালত (ট্রাইব্যুনালে)পাঠানো হয়। পরে ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ট্রাইব্যুনাল থেকে মীর কাসেম আলীর মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন বিচারকরা। লাল কাপড়ে মোড়িয়ে পরোয়ানা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাকর্তৃপক্ষ, আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ডিসি অফিস তথা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের এর কাছে পাঠানো হয়।
এরপর দিন ৭জুন মঙ্গলবার সকালে কাশেমপুর কারাগারে পাট-২ এ মীর কাসেম আলীকে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ এবং মৃত্যু পরোয়ানা জারির বিষয়ে জানানো হয়।
এর আগে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ৮ মার্চ মীর কাসেম আলীর আপিল খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ।
আপিলের রায়ে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন আহমেদকে খুনের দায়ে মৃত্যুদণ্ড এবং আরও ছয় অভিযোগে ৫৮ বছর কারাদণ্ডের সাজা বহাল রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ নম্বর অভিযোগে হত্যার দায় থেকে এই জামায়াত নেতা অব্যাহতি পেলেও ১১ নম্বর অভিযোগ সর্বোচ্চ সাজাই বহাল রাখা হয়েছে।
২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে দুই অভিযোগে মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ড এবং আট অভিযোগে সব মিলিয়ে ৭২ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল।
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন মতিঝিলে নয়া দিগন্ত কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার করা হয় দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এই ব্যবসায়ীকে। পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার বিচার। ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের রায়ে মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
তার বিরুদ্ধে আনীত ১৪টি অভিযোগের মধ্যে মীর কাসেমের আপিল আংশিক মঞ্জুর করে ৪, ৬ ও ১২ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে। আর ২, ৩, ৭, ৯, ১০, ১১ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে আপিল নাকচ করে ট্রাইব্যুনালের রায়ই বহাল রাখা হয়েছে।
মীর কাসেম আলী ষষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধে চূড়ান্তভাবে মৃত্যুদণ্ডের সাজা পেয়েছেন।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/এফএইচ/এমএস/এসআই