
ডেস্কঃ লিওনার্দ কোহেন একজন কানাডিয়ান কবি, গীতিকার, গায়ক এবং ঔপন্যাসিক। ১৯৩৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর, কানাডার মনট্রীলে তার জন্ম। কলম আর গিটার হাতে, ভারী কন্ঠে মানুষকেসত্য এবং আশার বাণী শোনানোর দায়িত্ব নিয়েছেন সেই পঞ্চাশের দশক থেকে।স্রষ্টার প্রতি আবেদন ও ভালোবাসার প্রতি নিবেদনে ভরা তার কবিতার খাতা, গানের কথা।
I did my best, it wasn’t much
I couldn’t feel, so I tried to touch
I’ve told the truth, I didn’t come to fool you
And even though it all went wrong
I’ll stand before the Lord of Song
With nothing on my tongue but Hallelujah
এমন আশিটি স্তবক দিয়ে তিনি সাজিয়েছেন তার ‘হ্যালেলুইয়া’ কবিতাটি। কবিতাটিতে সুর দিয়ে, হাতে গিটার নিয়ে গুরুগম্ভীর আওয়াজে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন কনসার্টে গানটি পরিবেশন করেন তিনি। যখন যে চরণ গাওয়ার ভাবোদয় হয়, সেই চরণটিই গেয়ে শোনান দর্শকদের। এছাড়াও, একটি নির্দিষ্ট চরণ মিলনস্থলের শ্রোতা-দর্শকের মাতৃভাষায় অনুবাদ করে গাওয়ার জন্য গানটি পেয়েছে জগতজোড়া সুখ্যাতি। মানুষের সাধারণ ভাবাবেগ ও চাহিদা তার গানে এসেছে স্পষ্ট ভাষায়-
Everybody’s talking to their pockets
Everybody wants a box of chocolates
And a long stem rose
Everybody knows
ঘটনাবহুল জীবনের বহু স্মৃতি ধরে রাখার মাধ্যম হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন কবিতাকে। একসময়ের প্রণয়িনী সুজান, জেইন ওজেনিস জপলিনের কথা ক্রমান্বয়ে উঠে আসে তার সুজান, ফেমাস ব্লু রেইনকোট ও চেলসি হোটেল গানে।
I remember you well in the Chelsea Hotel
You were talking so brave and so sweet
Giving me a head on the unmade bed
While the limousines waited in the street
Those were the reasons and that was New York
We were running for the money and the flesh
And that was called love for the workers in song
Probably still is for those of them left
সম্ভ্রান্ত ইহুদী পরিবারে জন্মগ্রহণ করা সত্যেও, পরবর্তীতে এক সময় গৌতম বুদ্ধের জীবনাদর্শে অনুপ্রেরিত হয়ে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি। ক্লাব টুয়েন্টি সেভেন এর অন্যতম সদস্য কার্ট কোবেইন তার ‘পেনিরয়াল টী’ গানে কোহেনকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন-
Give me a Leonard Cohen afterworld
So I can sigh eternally
কার্ট মারা যাওয়ার পর (আত্মহত্যা না হত্যা, তা এখনো বিতর্কিত), কোহেন অনুশোচনা প্রকাশ করেন। কোহেনের ধারণা, কার্টের সাথে তিনি মন খুলে কথা বলতে পারলে এমন নৃশংস পরিণতির শিকার হতে হতো না কাউকেউ। একাকীত্ব, যৌনতা, ব্যক্তিগত সম্পর্ক, ধর্ম, রাজনীতি ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে তার লেখা থেকে পরিচয় পাওয়া যায় তার বহুমাত্রিক পর্যবেক্ষণ শক্তির।
I smile when I’m angry, I cheat and I lie.
I do what I have to do to get it by.
But I know what is wrong, and I know what is right.
And I’d die for the truthIn My Secret Life.
কবিতায় তার অনুপ্রেরণা ইয়েটস, লোরকা, লেইটন, হুইটম্যান ও হেনরি মিলার। বাবার রেখে যাওয়া অঢেল সম্পত্তি তার জৈবিক চাহিদাকে নিস্পৃহ করায়, সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন তিনি। ‘স্প্যারো’ এবং ‘থটস অফ এ ল্যান্ডসম্যান’ কবিতা রচনার জন্য ১৯৫১ সালে, ছাত্রাবস্থায় তিনি চেস্টার ম্যাগনাটেন সাহিত্য প্রতিযোগিতার বিজয়ী হন। ১৯৫৪ সালের মার্চে, জনপ্রিয় কানাডিয়ান ম্যাগাজিন ‘সি আই ভি/এন’ তার কবিতা প্রকাশ করে। ম্যাগাজিনের একই সংখ্যায় তার বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষকের কবিতাও ছাপা হয়। এরপর ১৯৫৬ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতার বই- ‘লেট আস কম্পেয়ার মিথোলজিস’।
Dear friend, I have searched all night
Through each burnt paper,
But I fear I will never find
The formula to let you die
১৫ থেকে ২০ বছর বয়সের মধ্যে লেখা এমন কবিতাগুলো নিয়ে বইটি সংকলিত হয়। ১৯৬১ সালে প্রকাশিত হয় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘দি স্পাইস বক্স অফ আর্থ’। কবিতার শব্দচয়ন ও শক্তপোক্ত গাঁথুনিতে আপ্লুত হয়ে তৎকালীন বিশিষ্ট সমালোচক রবার্ট উইভার এ কাব্যগ্রন্থের সমালোচনায় কোহেনকে ‘সম্ভবত সর্বোৎকৃষ্ট তরুণ ইংরেজ কানাডিয়ান কবি’ বলে আখ্যায়িত করেন। দি স্পাইস বক্স অফ আর্থ কোহেনকে পরিচিতি দেয়, পাঠক বৃদ্ধির পাশাপাশি বিশ্বময় ছড়াতে থাকে তার কবিতা। ষাটের দশকেই প্রকাশিত হয় তার তিনটি কাব্যগ্রন্থ- ফ্লাওয়ারস অফ হিটলার, দি ফেভারিট গেইম, বিউটিফুল লুসার্স; তিনি পরিচিত হতে থাকেন এমন এক ব্যক্তি হিসেবে, যার আত্মিক মুক্তি ঘটে লেখনীতে। এসব লেখনী মিশ্রভাবে সমালোচিত হওয়ার পাশাপাশি কম সংখ্যক কপি বিক্রিত হলেও থেমে থাকেনি তার যাত্রা। নিজের কবিতাকে গানে রূপান্তর করায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত হয় তার ‘ডেথ অফ এ লেডিস ম্যান’ কাব্যগ্রন্থ। লম্বা বিরতির পর, ১৯৮৪ সালে বাজারে আসে তার ‘বুক অফ মার্সি’ যার জন্য তিনি ‘কানাডিয়ান অথর্স অ্যাসোসিয়েশন লিটারারি অ্যাওয়ার্ড ফর পোয়েট্রি’ জিতে নেন। কবিতা তার কাছে পুড়ে যাওয়া জীবনের অবশিষ্টাংশ। জীবনের সব স্বীকৃতি শুধু কবিতার জন্যই মিলেছে, এমন নয়; এই কবিতাই গানে রূপান্তরিত হয়ে তার জনয় স্থান করে দিয়েছে কানাডিয়ান মিউসিক হল অফ ফেইম, কানাডিয়ান সংরাইটার্স হল অফ ফেইম এবং আমেরিকান রক এন্ড রোল হল অফ ফেইমে। ২০১১ সালে ‘প্রিন্সেস অফ অস্ট্রিয়া অ্যাওয়ার্ড’ অর্জনের পাশাপাশি তিনি জিতে নিয়েছেন কানাডিয়ান নাগরিকের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘অর্ডার অফ কানাডা’।
সাহিত্য ও সংগীত ছাড়াও চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন মাধ্যমেও রয়েছে তার বিপুল অবদান। বহু শিল্পীর কন্ঠে বহুবার উচ্চারিত হয়েছে তার কবিতা, তার গান। তাকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে তথ্যচিত্র, রূপালি পর্দায় তার আগমন ঘটেছে বহুবার। গান ও কবিতার পাশাপাশি সম্প্রতি চিত্রশিল্পী হিসেবেও তার আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। তারঅর্জন ও কর্মজীবনের সকল খুঁটিনাটি ধারাবাহিক ভাবে লিপিবদ্ধ আছে cohencentric.com ওয়েবসাইটে।
নিউজনেক্সটবিডিডটকম/এসকে/টিএস