
ঢাকা: অমর কথাশিল্পী শওকত ওসমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপনে রাজধানীতে শুরু হয়েছে দুই দিনের উৎসব।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনের সামনে উন্মুক্ত চত্বরে উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট লেখক, রবীন্দ্র গবেষক ও প্রবন্ধকার আহমদ রফিক।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর কয়েকটি দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা। তারা পরিবেশন করেন- ‘আমরা পূর্বে পশ্চিমে’, ‘মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপা রে তুই’ প্রভৃতি গান। এরপর শওকত ওসমান-এর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
আহমদ রফিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী আলোচনা পর্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আন্দালিব রাশদী। এছাড়া, আলোচনায় অংশ নেন হায়দার আকবর খান রনো, শওকত ওসমানের পুত্র আশফাক ওসমান এবং রকিবুল হাসান।
এরপর বিকেল সাড়ে ৪টায় শুরু হয় প্রথম দিনের অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় পর্ব। এ পর্বের শুরুতে আবৃত্তি পরিবেশন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম। এসময় তিনি শওকত ওসমানকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। এরপর বিশিষ্ট লেখক, রবীন্দ্র গবেষক ও প্রবন্ধকার আহমদ রফিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা পর্বে শওকত ওসমানের জীবন ও সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবু হেনা। এরপর শওকত ওসমান স্মারকগ্রন্থ এবং তার ছবির অ্যালবামের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। অতিথিদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানান উদীচীর শিল্পী-কর্মীরা।
সভাপতির বক্তব্যে আহমদ রফিক বলেন, শওকত ওসমান ছিলেন একজন মিথ। বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতে তার অবস্থান ছিল ঈর্ষনীয়। তিনি মূলত কথাশিল্পী হিসেবে পরিচিত হলেও একইসঙ্গে তিনি ছিলেন সফল প্রবন্ধকার, ছাড়াকার, নাট্যকার বা এক অর্থে একজন সব্যসাচী লেখক। শওকত ওসমান একজন আধুনিক সমাজ-সচেতন, অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী, মানবতাবাদী এবং প্রগতিশীল ঘরানার একজন সাহিত্য স্রষ্টা ছিলেন বলেও মন্তব্য করেন আহমদ রফিক। সকাল ও বিকালে দুটি পর্বই সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন।
এছাড়া, সন্ধ্যায় শওকত ওসমান রচিত ‘ক্রীতদাসের হাসি’ উপন্যাস অবলম্বনে রচিত নাটক ‘ক্রীতদাসের হাসি’ পরিবেশন করে নাগরিক নাট্যাঙ্গণ। নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন লাকী ইনাম। কথাশিল্পী শওকত ওসমান স্মৃতি পরিষদ এবং বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর যৌথ আয়োজনে এ উৎসব চলবে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত। অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে প্রদর্শিত হচ্ছে শওকত ওসমানের জীবনের নানা পর্বে বিভিন্ন দুর্লভ আলোকচিত্র।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন ৩ জানুয়ারি মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। এ পর্বে আলোচনা করবেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক এমিরেটাস ড. আনিসুজ্জামান, উদীচীর সাবেক সভাপতি ও সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত, শিল্পী হাসেম খান এবং সেলিনা হোসেন। এছাড়া, দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায়ও থাকবে সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নাটক পরিবেশনা এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনী।
গ্রন্থনা ও সম্পাদনা: জাহিদ