
এম কে রায়হান, ঢাকা: দুই কোটি মানুষের এ শহরে সমস্যার যেন শেষ নেই। একদিকে যানজট তো অন্যদিকে বায়ু দূষণ। আর রাস্তায় বের হলেই কানে আসে নানা রকমের শব্দ। এই শব্দের বেশির ভাগই তৈরি হয় গাড়ির হর্ন থেকে। রাজধানীতে যে পরিমান শব্দ হয় যা মাত্রার থেকে অনেক বেশি, এমনটাই বলছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবাআ) জরিপ।
ঢাকায় হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার অবৈধ হলেও মানছেন না কেউ। মাঝে মাঝে ট্রাফিক পুলিশ এসব হর্ন খুলে নিয়ে জরিমানা করে থাকেন। তবে জরিমানা মাত্র ১০০ টাকা। আর তাই অনেকে জেনেও ব্যবহার করছেন এসব হর্ন। আর অপ্রয়োজনে হর্ন বাজানোর মানুষিকতা আছে সবার মাঝেই।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবাআ) গত ১ মাসে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ৪৫টি স্থানে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করে। তাদের জরিপ মতে দিনের বেলায় নিরব এলাকায় ৮৩.৩ থেকে ১০৪.৪ মাত্রা ডেসিবল শব্দ পাওয়া গেছে, যেখানে থাকার কথা ৪৫ ডেসিবল। আবাসিক এলাকায় পাওয়া গেছে ৯২.২ থেকে ৯৭.৮ ডেসিবল, যেখানে থাকার কথা ৫০ ডেসিবল।
অন্যদিকে বাণিজ্যিক এলাকায় পাওয়া গেছে ৯৪.৩ থেকে ১০৮.১ ডেসিবল, যেখানে থাকার কথা ৭০ ডেসিবল। আর মিশ্র এলাকায় পাওয়া গেছে ৮৫.৭ থেকে ১০৫.৫ ডেসিবল, যেখানে থাকার কথা ৬০ ডেসিবল।
এই শব্দ দূষণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ট্রাফিক বিভাগের সদস্যসহ সাধারণ মানুষ। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। এক ট্রাফিক কর্মকর্তা নিউজনেক্সটবিডি ডটকমকে বলেন, ‘ডিউটি করার সময় অতিরিক্ত শব্দের কারণে আমাদের অনেক সমস্যা হয়। মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে। আর মাঝে মাঝেই প্রচুর মাথা ব্যথা করে। আইন প্রয়োগের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, ‘আমরা মাঝে মধ্যে এসব গাড়িকে জরিমানা করি যারা হর্ন ব্যবহার করে, কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয় না।’
এ বিষয়ে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ আরিফ আনোয়ার নিউজনেক্সটবিডি ডটকমকে বলেন, ‘অতিরিক্ত শব্দের কারণে কানের টিস্যু গুলো ধীরে ধীরে অকেজো হয়ে যায়। এছাড়াও রক্ত যেসব ধমনী দিয়ে প্রবাহিত হয় তাদের উপর চাপ তৈরি করে। ফলে মস্তিষ্কের ভিতরে এবং হৃদপিণ্ডের ভিতরে ছোট ধমনী গুলো ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। আর শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছ- কানে কম শোনা সহ, শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলা, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্থায়ী মাথাব্যথা, ক্ষুধামন্দা, অবসাদ, নিদ্রাহীনতাসহ নানাবিধ জটিল রোগে।’
পরিবেশবিদ আতিক নজরুল নিউজনেক্সটবিডি ডটকমকে বলেন, ‘শব্দ দূষণে আইন থাকলেও তার প্রয়োগ না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও মানুষদেরও সচেতন হতে হবে। আর আইনে যে জরিমানার কথা বলা আছে তা খুব সামান্য, জরিমানার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে।’
সম্পাদনা: জাহিদ