
ঢাকা:
বাংলা চলচ্চিত্রে যে গল্প দেখে অভ্যস্ত সাধারণ দর্শক, দৃশ্যায়নের সুনিপুণ কারুকার্যে সেলুলয়েডের সেই ভাষা বদলে দিয়েছেন নির্মাতা খিজির হায়াত খান। এই পরিচালকের প্রথম ছবি ‘অস্তিত্বে আমার দেশ’, যেখানে তিনি দেখিয়েছেন একজন বীরশ্রেষ্ঠর জীবন ও কর্ম কিভাবে বদলে দিতে পারে পলায়নপর এক যুবকের দৃষ্টিভঙ্গি। ‘অস্তিত্বে আমার দেশ’ ছবিটি দারুণ প্রশংসিত হওয়ার পর খিজির হায়াত খান নির্মাণ করেন দেশের প্রথম স্পোর্টস ফিল্ম ‘জাগো’। ফেরদৌস-বিন্দু অভিনীত ফুটবল কেন্দ্রিক এই চলচ্চিত্রে বিয়োগান্তক বিজয়ের যে চিত্র তিনি এঁকেছিলেন, রূপালী ক্যানভাসে তা দেখে মুগ্ধ হয়েছিল দর্শক। তারপর সামান্য বিরতি নেন খিজির হায়াত খান, দেশ ছেড়ে চলে যান কানাডায়। দেশটির ভ্যাঙ্কুভারে ‘মাস্টার্স ইন ডিজিটাল মিডিয়া অ্যান্ড কনসেনট্রেশন ইন ফিল্ম মেকিং’ কোর্সে ভর্তি হন। এ সময় তিনি ‘আই ফর অ্যান আই’ শিরোনামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন যা ২০১৫ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা খিজির হায়াত খান’র মুখোমুখি হয়েছিলেন নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’র সহ সম্পাদক সজিব ঘোষ। বাংলা চলচ্চিত্রের বর্তমান হাল ও ভবিষ্যতের রঙ্গীন স্বপ্ন নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা বিনিময় হয়েছে বিস্তর। পাঠকদের জন্য আজ থাকল সেই আলোচনা।
এই ব্যস্ততার মাঝে কেমন আছেন?
ভালো আছি, কাজের চাপকে আমি পজেটিভ হিসেবেই দেখার চেষ্টা করি।
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ইন্ডিপেন্ডেন্ট নির্মাতা হিসেবে আপনি পরিচিত, বিষয়টা এমন কেন?
ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম মেকারের কনসেপ্টটা আমার ভালো লাগে। আমার কাছে ‘শিল্পায়ন’ থেকে ‘কুটির শিল্প’ ভালো লাগে। সেক্ষেত্রে আমার কাছে মনে হয়েছে যে; আমার মতো করেই, যেহেতু এই ভিজুয়াল মিডিয়াকে আমি ভালোবাসি, এটা আমার প্যাশন—আমি এটাতে আমার মতো করেই থাকতে চাই। বাংলাদেশের গতানুগতিক ধারার মতো থাকতে চাই না। কারণ আমি ওই ধারাটাকে শ্রদ্ধা করি না।
এই শ্রদ্ধা না করার পেছনে কারণ?
একটা ইন্ডাস্ট্রি যখন মূল্যবোধ হারায় বা যখন কোনো মূল্যবোধই থাকে না; তখন আসলে ওটাকে শ্রদ্ধা করা যায় না। আমার কাছে মনে হয়, আমাদের ইন্ডাস্ট্রি, আমরা, মূল্যবোধ হারিয়েছি। সিনেমা বা এ ধরনের শিল্পচর্চা; একটা জাতির জন্য আয়না, কিন্তু আমদের এখানে এটা শুধুই ব্যবসা, ব্যবসাটাও এমন যে একটা নোংরা জায়গায় চলে গেছে, প্রফেশনাল ব্যবসা হলেও হতো। এখানে উপরে উঠতে হলে অনেক নোংরামি করতে হয়, অনেক পলিটিক্স করতে হয়, নিজের কোনো মোরালিটি থাকে না। সব কিছু মিলিয়ে যে জিনিসটা পঁচে গেছে সেটাকে তো আর শ্রদ্ধা করা যায় না।
‘পঁচা’টাকে ভালো করার উপায়?
চেষ্টা করে তো যাচ্ছি।
অন্যদের জন্য পরামর্শ?
ধৈর্য ধারণ করে সংঘবদ্ধ ভাবে ফাইট করে যাওয়া। কিন্তু এটাও ঠিক যে, এই লড়াই অনেক কঠিন। তাই এখানে ধৈর্য ধারণ করে যুদ্ধ করতে হবে। ধৈর্য হারালে এই যুদ্ধে আসলে কোনো কূলকিনারা পাওয়া যাবে না।
আপনার তৃতীয় সিনেমার কাজ চলছে?
তৃতীয় সিনেমার কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।
কেন?
অনেকগুলো কারণের মধ্যে প্রধান কারণ; এটা আমি ব্যক্তিগত অর্থায়নে করছিলাম। আমি যেভাবে পরিকল্পনা করছিলাম সেভাবে আমি অর্থ জোগাড় করতে পারিনি। তাই এ মুহূর্তে এটা বন্ধ আছে। চেষ্টা করছি আবার টাকা পয়সা একত্রিত করার যাতে কাজ শুরু করতে পারি। কিন্তু আমি ঠিক বলতে পারছি না কবে আবার ছবির কাজ শুরু করতে পারবো।
তাহলে আপনার দ্বিতীয় সিনেমা ‘জাগো’র পর সবাইকে জাগিয়ে দিয়ে হঠাৎ আপনি উধাও?
আমার মনে হয় না আমি ‘জাগো’ দিয়ে সবাইকে জাগিয়ে দিতে পেরেছিলাম সেই মুহূর্তে। অনেক কষ্ট করে ছবিটা বানিয়েছিলাম, অনেকটা অভিমানেই আমি দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। তারপর দেশের প্রতি টানটা হয়তো অভিমানের চেয়ে বেশি ছিলো তাই আবার ফিরে আসছি।
নির্মাতা হিসেবে অনেক কিছুই তৈরি করেছেন, কোনটাকে বেশি যত্ন নিয়ে দেখেন?
অফকোর্স ফিল্ম।
সামনে আর কোনো সিনেমার পরিকল্পনা আছে?
যেহেতু ‘প্রতিরুদ্ধ’ (খিজির হায়াত খান’র তৃতীয় সিনেমা) অসমাপ্ত রয়ে গেছে, এই মুহূর্তে আমার মাথায়; গল্প যে নাই তা ঠিক না। যেহেতু আমি ‘প্রতিরুদ্ধ’ নিয়ে একটা কঠিন জায়গায় আটকে আছি। তাই এই মুহূর্তে আমার মাথায় কোনো আইডিয়া থাকলেও এটা নিয়ে আমি কাউকে কিছু বলতে চাই না।
আপনার কি মনে হয় আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি আইডিয়া সঙ্কটে ভুগছে?
আমার মনে হয় না আইডিয়া সঙ্কটে ভুগছে। আমার মনে হয় আইডিয়া এখানে আছে, তবে আইডিয়াকে ঠিকঠাক ভাবে সামনে নিয়ে যাওয়ার জন্য যেসব উপকরণ দরকার আমরা সেটার সঙ্কটে ভুগছি।
তাহলে আমরা আমাদের সম্প্রতিক সিনেমায় মৌলিক গল্প পাচ্ছি কতটুকু?
মৌলিক গল্প নিয়ে ছবি করার জন্য যে ধরনের অবকাঠামো দরকার সে ধরনের অবকাঠামো আমাদের নেই। আমার যদি অবকাঠামো না থাকে; আসলে ফিল্মটাতো একটা ব্যয়বহুল মিডিয়া, ওই যে বলে না, দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্র। আমাদেরটা হচ্ছে ‘অনিয়মের দুষ্ট চক্র’। তাই এটাকে সরল ভাষায় বিশ্লেষণ করা কঠিন। সবাই আমরা কম বেশি দোষী, আজকে আমরা যেখানে এসে দাঁড়িয়েছি; আমাদের মিডিয়া, ফিল্ম, টিভি, ছোট পর্দা বড় পর্দা একটা ধংসের দিকে চলে গেছে এটার জন্য। আমরা জাতি হিসেবে সবাই কম বেশি দোষী।
এফডিসি, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য বিশাল একটা প্লাটফর্ম …
ছিলো
ছিলো কেন?
নষ্ট হয়ে গেছে, তাই ছিলো। যে জিনিস থাকে না সেটাতো অতীত। যেটা মরে যায় সেটাতো অতীত। এফডিসি ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি বলবো না সবাই খারাপ, কিন্তু যারা ওখানে কাজ করছে ওরা ওটাকে ধ্বংস করে ফেলছে। এবং ওইখানে গেলে একটা ভালো মানুষও খারাপ হয়ে যাবে। এফডিসি এক সময় সিনেমার কর্ণধার ছিলো, অনেক বড় বড় নির্মাতা ওখান থেকে বের হয়েছে। বর্তমান এফডিসিতে যদি ‘প্রফেট’ পাঠানোও হয় সে’ও ধ্বংস হয়ে যাবে। এটাই সত্য কিন্তু কেউ বলে না বা বলতে চায় না।
এর পেছনের কারণ কী হতে পারে?
সব চেয়ে বড় দোষ হচ্ছে যারা এফডিসিটাকে চালাচ্ছে। একটা জিনিস ভালো থেকে খারাপ হয়ে গেছে, এটা যদি ভালো হতো; তাহলে এটা কেন খারাপ? যারা এটাকে বছরের পর বছর চালাচ্ছে এবং যেভাবে চালাচ্ছে, এটার জন্য দায় দায়িত্ব সবার আগে তাদেরকেই নিতে হবে। আমি এফডিসি’র একজন তালিকাভুক্ত পরিচালক কিন্তু আমি এফডিসিতে পা দেই না। কেননা আমার কাছে মনে হয় ওই জায়গাটাতে পা দেয়ার মতো পরিবেশ নেই এবং আমার ইচ্ছাও নেই। যতদিন না আমি ওখানে পরিবর্তন দেখবো। এখন বলা যেতে পারে আপনি না গেলে পরিবর্তন করবেন কিভাবে? পরিবর্তন করতে হলে আসলে— চেষ্টা করার একটা পরিবেশ লাগে, আমার কাছে মনে হয় না সেই পরিবেশটা এফডিসিতে এখন আছে।
তাহলে আপনি শুধু তালিকাভুক্ত পরিচালক এজন্যই যেন সিনেমা হলে আপনার ছবিগুলো চলে?
এখন ছবি রিলিজ দিতে হলে আপনাকে লিস্টেট হতে হবে।
তালিকাভুক্ত না হলে সিনেমা হলে ছবি রিলিজ দেয়া যাবে না, এটাকে কিভাবে দেখেন?
আমার কাছে মনে হয় এটার দুইটা সাইট আছে; যে কারণে এ নিয়মটা করা হয়েছে — যাতে ফিল্মের সঠিক নীতিমালা থাকে। তাছাড়া যে কেউ পরিচালক হয়ে যাবে। এখন ডিজিটাল যুগ এটা আরো সহজ। একটা নাটক বানিয়ে আমি বলে দিতে পারি সিনেমা বানিয়েছি। তাই তালিকাভুক্ত পরিচালক হতে হলে তার দুইটা ছবি সেন্সর পেয়ে মুক্তি পেতে হবে। এটার যে উদ্দেশ ছিলো ওইটা আসলে অনেক সলিড ছিলো। ওইটাকেও বিভিন্ন ভাবে ইয়ে (ভাঙচুর) করা হয়েছে। আপনি হয়তো জানেন এফডিসিতে একটা সময় গেছে এবং এখনো; একজন লিস্টেট ডিরেক্টর হওয়ার জন্য যে পরিমান যোগ্যতা দরকার তা আপনি এড়িয়ে যেতে পারবেন যদি আপনি একটা নিদিষ্ট পরিমাণ টাকা খরচ করেন। অনেকে স্বীকার করবে না, কিন্তু এটাই সত্য।
এটা কি অন দ্য রেকর্ড (এটাও কি লিখবো)?
আমি যা বলছি সবকিছুই অন দ্য রেকর্ড।
তাহলে এফডিসি’কে বাদ দিয়ে কি কিছু করা যাবে?
বাংলাদেশ সংসদ কে বাদ দিয়ে কি বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব! এফডিসিকে বাদ দিয়েও চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব না। তবে এফডিসিকে পরিবর্তন আনতে হবে। বাংলাদেশের সরকারেরই তো এফডিসির প্রতি নজর নাই। একটা লোককে তারা এমডি বানালো সেই লোকটা এখন তিন কোটি টাকার…
আমাদের কিন্তু এখন তথ্য মন্ত্রণালয়ও করা হয়েছে, তবুও কি বলবেন সরকারের নজর নাই?
এখন আমার নজর আছে; নজর দিলাম আবার চোখটা বেঁধে রাখলাম তাহলে নজর দিয়ে লাভ কি। আমাদের তথ্যমন্ত্রী, আমাদের সংস্কৃতিমন্ত্রী ওনারা আসলে সিনেমার জন্য কতটুকু করেছেন।
কিন্তু সংস্কৃতি মন্ত্রী তো নিজেও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব?
এর জন্যই তো কষ্টটা বেশি, প্রশ্নটাও অনেক বড়। ওনার মতো একজন মানুষ আসলে সিনেমার জন্য কী করেছেন। কয়েক দিন পর পর কলকাতা থেকে আর্টিস্ট এনে শুধু মিটিং করলে, আবার যৌথ প্রযোজনার নামে সিনেমাটাকে অন্য দিকে… আসলে তারা কি করেছেন একটা সেন্সর নীতিমালা ষাট/সত্তরের দশকের। আমাদের সিনেমাকে উন্নত করার জন্য আসলেই কি তারা সঠিক কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন। আমার তো মনে হয় না। আমি স্যরি, আমাদের রাজনীতিবিদরা যে দায়িত্ব নিয়ে আসে, সে দায়িত্বটাকে পালন করার জন্য যেটা করা দরকার অনেক রাজনীতিবিদরাই সেটা করে না। আমি আমার আঙ্গুল কারো দিকে তুলতে চাই না। তবে আমি মনে করি আমি যেটা বিশ্বাস করি বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই সেটা বিশ্বাস করে।
তাহলে কি এভাবে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি না?
পিছিয়ে যাওয়া কিন্তু অনেক সময় আবার এগিয়ে যাওয়াও। আমি ধাক্কা খেয়েছি বলেই আজকে বলতে পারি, আমি ইন্ডিপেন্ডেট ফিল্মমেকার। হতে পারে আমার অনেক কিছু নাই। কিন্তু ওই ধাক্কাটা খেয়েছি বলেই হয়তো নিজেকে ওই ভাবে পুশ করতে পেরেছি।
এটা তো ব্যক্তিগত, এর বাইরেও কি অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি না?
অবশই, এটা ঠিক বাইরেরটা এগিয়ে গেছে। আমি আসলে বিশ্বাস করি প্রথমে নিজেকে উন্নত করতে হবে তারপর একসঙ্গে উন্নতির দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
কিন্তু একটা সময় তো অন্যান্যদের থেকে আমরা এগিয়েছিলাম, আজকের এই অবস্থানের জন্য নির্মাতাদের দায় কতটুকু?
আমি যেটা বললাম, আমাদের মিডিয়ার এই বেহাল অবস্থার জন্য সবাই কম বেশি দায়ী।
একটা সময় এফডিসিতে ১০/১২ লাখ টাকায়ও সিনেমা হয়েছে…?
হা, হয়েছে। এখন দেখেন এফডিসির প্রতি অনেক ক্ষোভ তো, তারাই তো আসলে সিনেমার মূল কেন্দ্র। তারাই তো আসলে সিনেমাটাকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে আসছে যে, আমরা সেখানে যেতেই চাই না।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, একটা মঞ্চ হিসেবে এফডিসির কোনো দরকারই নাই। কেননা তারা নামে মাত্র দায়িত্ব পালন করেন। এটা আসলে এমন একটা জায়গায় চলে গেছে; কেউ একটা ফিল্মমেকার এই পরিচয়টা দিতে… মানুষ আসলে নাক সিটকায়। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আমি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা; পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এটাকে গর্বের সঙ্গে দেখা হয়, আমাদের এখানে এটা একটা ঘৃণিত পেশা। এই যে মনোভাব এটার জন্য এফডিসি অনেক অংশে দায়ী। এবং আমরা চলচ্চিত্র নির্মাতারা আমাদের যেই সম্মান দিয়ে দিয়েছি— চলচ্চিত্র নির্মাতা মানেই আমাদের ক্যারেক্টারে প্রবলেম আছে। এই যে জিনিসগুলা এগুলো তো সত্য, অপ্রিয় সত্য। এগুলো তো বলতে হবে, সমস্যা চিহ্নিত না হলে তো আর সমাধান হবে না। এখন আমরা যারা বলতে চাই তাদের কেউ কেউ মাফিয়া বলে, হ্যাঁ আমি মাফিয়া। তাতে কি? যদি একটা সত্যি কথা বলতে গেলে আপনাকে কিছু বিশেষণে আখ্যায়িত করা হয়… তাহলে আমি মাফিয়া।
এ কথাগুলো কিন্তু অনেক ক্ষোভ থেকে আসে, আমার পাশের দেশ একটা সিনেমার উপর নির্ভর করে সারা পৃথিবী তাকে চিনে। আর তার বর্ডারের কাছে থেকে তার সমান ট্যালেন্ট নিয়ে সেই ট্যালেন্টটাকে আমি কাজে লাগাতে পারলাম না। আমাদের ১৭ কোটি মানুষের একটা মার্কেট আছে ওই মার্কেটটাও আমি কাজে লাগাতে পারলাম না। এবং নানা ভাবে এখন তার উপরই নির্ভরশীল বিনোদনের জন্য সেটা ছোট পর্দা হোক আর বড় পর্দা। তো ক্ষোভ আসবে না কেন? ক্ষোভ আশাটাই স্বাভাবিক। এটাতে যদি আমি খারাপ হই তো আমি খারাপ।
যৌথ প্রযোজনা, সম্প্রতি শাকিব-জিৎ’কেও এপার-ওপার করে দু’টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে কিভাবে দেখছেন?
আসলে যৌথ প্রযোজনা না বলে, এটাকে আমরা জাজ প্রযোজনা বলি। আসলে এটাতো একটা ফেস যায় বাংলাদেশের… কখনো এটা ছিলো কাকরাইলের দৌরাত্ব, কখনো এটা ছিলো দুই একটা চ্যানেলের দৌরাত্ব এখন এটা হচ্ছে ‘জাজ’ আর ‘আব্দুল আজিজ’ সাহেবের দৌরাত্ব। এটাও একটা সময় কেটে যাবে, কয়েকদিন পর কেউ একজন আসবে। যতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার এটার কোনো আলাদা নীতিমালা না করবে এবং বাংলাদেশ সরকার এখানে কোনো হস্তক্ষেপ না করবে, ততদিন পর্যন্ত এরকম ফেস বাই ফেস কেউ না কেউ আসবেই। কোনো না কোনো ‘আব্দুল আজিজ’ কোনো না কোনো চ্যানেল কোনো না কোনো গোষ্ঠী এটাকে ব্যবহার করার চেষ্টা করবে। এবং এটাই ফ্যাক্ট।
যৌথ প্রযোজনার নামে যা হচ্ছে আসলেই কি এটা যৌথ প্রযোজনা? যৌথ প্রযোজনা এক সময় যেসব ছবি বাংলাদেশে হয়েছে স্বাধীনতার পরে ওইসব ছবির মানদণ্ড আর এখনকার ছবির মানদণ্ড কি এক? আর শাকিব খান সম্পর্কে তো কিছু বলতেই চাই না। এই লোকটা বাংলাদেশের সুপার হিরো, হ্যা সে বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রিকে এক সময় টেনেছে কিন্তু সে একক ভাবে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে ধ্বংসও করেছে। একটা হিরোর অনেক দায়িত্ব আছে; আমিও বাংলাদেশের কিছু ভালো ভালো হিরোর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে… ‘সো হি ইজ এ রাবিশ গাই!’
এটাও কি অন দ্য রেকর্ড?
ইট ইজ অলওয়েজ অন দ্য রেকর্ড। হি ইজ এ রাবিশ গায়। ওর ক্যারেকটার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, বাংলাদেশের যদি সুপার হিরো হয়; সুপার হিরোদের কিছু দায়িত্ব থাকে। তার নামে যেসব ঘটনা আমরা শুনি বা প্রতক্ষদর্শীও… আপনার দায়িত্ব শুধু এটা না টাকা কামানোর জন্য সিনেমা করবো। আমরা অসলে ভুল মানুষদের সুপার হিরো বানাই। অনেক বড় ক্ষতি আমরা নিজেরাই করি। শাকিব খানের মতো লোকরা যারা এই দর্শকদের টাকায় সুপার হিরো হয়েছেন তারা তাদের দায়িত্বটা পালন করে না। শুধু নিজেরটা চিন্তা করে। এন্ড ইট ইজ অন দ্য রেকর্ড।
গেল ১০ বছরে আমরা হয়তো নায়ক পাচ্ছি কিন্তু অভিনেতা পাচ্ছি কতজন?
অভিনেতা পাচ্ছি না। আমাদের যে অবকাঠামো দরকার এটাতো নাই। আজকে ইন্ডাস্ট্রিতে আসছি, কালকে দু’টা বিজ্ঞাপন করছি, এরপর একটা সিনেমা করছি, তারপর নায়ক হয়ে গেলাম। কিন্তু যেটা বললাম নায়ক হতে হলে নায়কের দায়িত্ব নিতে হয়। যে দেশে অনন্ত জলিল স্টার, যে দেশে হিরো আলম স্টার, সেদেশে স্টার কথাটাতে… আসলে আমি কি বলবো।
শেষ কথা, সবাইকে কেন শত্রু বানাচ্ছেন?
শত্রু বানাচ্ছি না। বলতেছি, কেন না আমার হারানোর কিছু নাই। কারণ এই ইন্ডাস্ট্রি থেকে আমার আশা করারও কিছু নাই।
সম্পাদনা: তুহিন সাইফুল