
পরীমণি, ঢাকা: আমার কাছে শাবানা ম্যাডাম এমন একজন মানুষ যার সম্পর্কে লেখার সাহস, যোগ্যতা কোনোটাই আমার নেই। একটা ঘটনা দিয়েই শুরু করছি। আমি তখন অনেক ছোট। নানু বাড়িতে তখন বিদ্যুৎ আসেনি। সাদাকালো টেলিভিশন ব্যাটারিতে চালাতো। শুক্রবার বিটিভিতে দুপুরে সিনেমা দেখাতো। আর আশপাশের বাড়ি থেকে অনেক মানুষ আসতো, শুক্রবার মানেই নানু বাড়িতে একটা ছোটখাট উৎসব লেগে যেতো।
ওই রকমই এক শুক্রবার রীতিমতো লোকজনে ঘর ভরে গেল। ছবি শুরু হলো। ছবির নাম ‘ভাত দে’। ছবি শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর অনেকেই বলতে শুরু করে- নাচ নাই, প্রেম নাই কেমন জানি বইটা। হুম ‘বই’, শব্দটা শুনে আমি সাথে সাথে মার্ক করলাম। এর কিছুক্ষণ পর যখন বিজ্ঞাপন শুরু হলো আমি আমার নানুর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম ছায়াছবিকে ‘বই’ বলে কেন? এই বই কি আমার স্কুলের বইয়ের মতো? নানু তখন আমাকে বুঝিয়ে বললো তোমার স্কুলের বই থেকে পড়ে শিখতে হয় আর এই বই থেকে দেখে শিখতে হয়। এখানে গান, নাচ, মারামারি থাকে। মানুষের শেখার অনেক কিছু থাকে শুধু বুঝতে হয়। নানু বললো আজ তুমি এই বইটা দেখো রাতে বলবা কিছু শিখতে পারছো কি-না?
রাতে নানুর কাছে পরীক্ষা দিতে হবে আর তাই খুব মনোযোগ দিয়ে ছবিটা দেখতে শুরু করলাম। যত দূর মনে পরে আমি তখন ক্লাস টুতে পড়ি। ছবিটা শেষ হলো আর আমার কান্না শুরু হলো। সে কি কান্না পুরো বাড়ি ভর্তি মানুষ আমার কান্না থামাতে পারছে না। এক পর্যায় কান্না করতে করতে ক্লান্ত হয়ে ছোট খালা মনির কোলেই ঘুমিয়ে গেলাম।
ঘুম থেকে উঠে আমার মন ভীষণ খারাপ। ভাত দেখতেই সেই মায়া ভরা চেহারাটা চোখে ভেসে উঠলো। তিনি শাবানা ম্যাডাম। ওই ছবি থেকেই শিখেছি এক মুঠো ভাতের কি মূল্য। এক মুঠো ভাতের জন্যই জীবনের আর্তনাথ। ‘ভাত দে’ ছবিটা আমার পড়ার বইয়ের মতই একটা অংশ ছিল আর শাবানা ম্যাডাম আমার অভিনয়ের দর্পন।
আমি যখন চলচ্চিত্রে পা রাখলাম তখন আমার এই আইডল চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে চলচ্চিত্রের খারাপ সময় চলছে। চলচ্চিত্র দক্ষ শিল্পীহীনতায় ভুগছে। আর এমন সময় শাবানা ম্যডামের মত একজন দক্ষ অভিনেত্রীর খুব প্রয়োজন। এক কথায় শাবানা ম্যডামের বিকল্প কিছু নেই।
লেখক: অভিনেত্রী ও মডেল
সম্পাদনা: আসিফ আলম, সজিব ঘোষ