
ডেস্ক: অফিসের জন্য বেশ তাড়াহুড়ো করেই ছুটছিলাম। ভর দুপুরের দাবদাহে বিশ্রামরত রিক্সাচালকেরা কোথাও যেতে রাজি নয়। বাংলা মোটর যাবে কিনা জিজ্ঞেস করতেই একজন রিক্সাচালক যেন লাফিয়ে উঠলেন, যেন বাংলা মোটরই তার কাঙ্খিত গন্তব্য। ভাড়ার কথাও মেটাতে হলো না তার সাথে। পাশে থাকা আরেক রিক্সাচালক টিপ্পনী কেটে বললেন- “যান শেখ সাহেব, বাংলা মোটর থেইকা ঘুইরা আসেন।” উঠে বসলাম তার রিক্সায়, প্যাডেল ঘূর্ণনের সাথে তার প্রশ্ন শুরু- “মামা কি শিল্পী?”
চুল-দাঁড়ি, হাতে নোটবুক-কলম আর অগোছালো পোশাক-পরিচ্ছদ দেখে এই মাঠ ফাটা রোদেও তিনি আমাকে টেনে নিয়ে চলছেন, কারন তার ধারণা আমি শিল্পী।
আমার না-বোধক উত্তরে তার মন ভাঙলো না মোটেও। উল্টো তার সাথে আড্ডা দিয়ে আমার মনে হলো, এই ব্যক্তির একটি সাক্ষাৎকার লিপিবদ্ধ করা উচিৎ। আমি সময়কাল ঠিক করে, ঠিক একদিন পর তাকে নিয়ে আসি নিউজনেক্সটবিডিডটকম’র কার্যালয়ে। সেখানে নানান কথোপকথনে বেরিয়ে আসে তার শিল্পী সত্ত্বার পরিচয়।
রিক্সাচালকের নাম শেখ মোতালিব, বাড়ি পাবনা জেলার সাথিয়া থানায়। বয়স ২৭ বছর। জীবিকা নির্বাহের মূল উপজীব্য রিক্সা, যদিও একসময় জীবিকার ৬০ ভাগ তার গানের গলা দিয়েই অর্জিত হতো। রিক্সা চালানোর পাশাপাশি এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন গান, বাজনা আর লেখালেখি; বাড়িতে তার কাছে দোতারা বাজানো শিখতে আসেন অনেকেই। লোকত্তর দর্শনের চিশতিয়া তরিকা দ্বারা তিনি উদ্বুদ্ধ। তাই কথোপথনের শুরুতেই তিনি তার গানের ওস্তাদ মনিরুজ্জামান ফকির এবং দোতারার ওস্তাদ কুদ্দুস চেয়ারম্যানের কথা স্মরণ করেন। স্মরণ করেন দৈনিক দুই টাকা মজুরিতে হাড়ভাঙা খাটুনির কথা, প্রকাশ করেন নিজ দর্শন- একবার না পারিলে দেখো শতবার।
শৈশবে স্কুলে না যাওয়ায় নাম দস্তখত করা ছাড়া বর্ণ পরিচয় একদম নেই বললেই চলে। গান লিখছেন ১২ বছর ধরে; গানের কথা মাথায় এলে মোতালিবের হয়ে সেগুলো লিখে রাখে তার ভক্ত ও ছাত্ররা। মাঝে মাঝে স্ত্রী আর কন্যাও তার লেখায় সাহায্য করে থাকে। এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় শতাধিক গান লিখে সুর করেছেন, যার মধ্যে বিশটিরও বেশি গান করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু’র প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। বন্ধুদের অনেকেই তাকে ভালোবেসে ‘শেখ সাহেব’ বলে ডাকে তাই। বঙ্গবন্ধুকে নিজ চোখে না দেখা সত্যেও তাকে নিয়ে এত গান করার কারন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন-
“আমার তরিকায় শুধু গুরুরে ভক্তি জানায়ে গান করার অনুমতি আছে, গুরুই পিতা, গুরুই মাতা। উনি যেহেতু জাতির পিতা, তাই উনিও আমার গুরু, উনার কারনেই আইজ দেশটার নাম বাংলাদেশ। আমি আমার মনের সেই জায়গাটা থেকে, সেই ভক্তির জায়গাটা থেকে উনারে নিয়ে গান করি। গানে গানে উনার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।”
পূর্বের শর্তমত, গান শোনানোর জন্য দোতারা আর একতারা বয়ে এনেছিলেন রিক্সাচালক শেখ মোতালিব। নিজের লেখনী, সুর ও গায়কিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বন্দনারত শেখ মোতালিবের গানের ভিডিওটি দেখুন-
নিউজনেক্সটবিডিডটকম/এসকেএস