
ঢাকা: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এতদিন ধরে বিএনপি নির্বাচন নিয়ে যে অভিযোগ করত সেই অভিযোগের সঠিক জবাব দিয়েছে নারায়ণগঞ্জবাসী।
শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীসহ সেখানকার আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এসময় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে দায়িত্ব পালনরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাচন কমিশনসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
সেলিনা হায়াৎ আইভীকে পুনর্নির্বাচিত করার মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জের জনগণ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় গুরুত্ব দিয়েছে বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘একটা সরকারের ধারাবাহিকতা যদি থাকে, তাহলে উন্নয়ন অব্যাহত থাকে। এ বিষয়টি নারায়ণগঞ্জের মানুষ বুঝতে পেরেছে।’
‘নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রতি আমার বিশ্বাস ও আস্থা ছিল, তারা ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে নৌকা মার্কায় ভোট দেবে এবং আইভীকে ভোট দেবে। এ জন্য তাদের আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার একটাই নির্দেশ ছিল—নির্বাচন হতে হবে শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু। সাধারণ মানুষ যেন ভোটটা সঠিকভাবে দিতে পারে।’
বিএনপির বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবির বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বলেন, ‘তারা আজকে আর কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছে না। কী যে বলবে! কোথায় কী আছে। কোথায় যেন দেখলাম, তারা বিচার বিভাগীয় তদন্ত চায়। যখন কিছু না পায়, তখন তো কিছু বলতে হবে।’ ‘এখানে আমার একটা প্রশ্ন। বিএনপির জন্মই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন যে সুষ্ঠু করা যায়, সেটা আওয়ামী লীগ সরকার দেখিয়েছে। আওয়ামী লীগের আমলে প্রতিটি নির্বাচনই অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়েছে। জনগণ যাকে ভোট দিয়েছে, তারাই জয়ী হয়েছে।’
আইভী পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন নতুন প্রকল্প নিতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে দেশের উন্নয়নের যে ক্ষতি হয়, তার দৃষ্টান্ত হিসেবে ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ের কথাও বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে যেসব অর্জন করেছিল, তা ২০০৮ সালে এসে আর পায়নি। ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসার পর অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেওয়ায় এটা হয়েছিল।’
অনুষ্ঠানে সেলিনা হায়াৎ আইভীও বক্তব্য দেন। তিনি তার বিজয়কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসর্গ করেন। একই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে সেটা পূরণের আশ্বাসও দেন।
বৃহস্পতিবার ৭৭ হাজার ৯০২ ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। নাসিক নির্বাচনে ১৭৪ কেন্দ্রে বেসরকারী ভাবে প্রাপ্ত ফলের ভিত্তিতে নৌকা প্রতীকে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী পেয়েছেন এক লাখ ৭৪ হাজার ৬০২ ভোট। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৭০০ ভোট।
এ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে অংশ নেয় মেয়র প্রার্থীরা। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নাসিকের ভোট গ্রহণ চলে। রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে রির্টানিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার বেসরকারী ভাবে মেয়র হিসেবে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
গ্রন্থনা ও সম্পাদনা: ইয়াসিন
আরো পড়ুন