
প্রীতম সাহা সুদীপ, ঢাকা: সমঝোতার অপেক্ষায় আছেন গুলিস্তানের দুই শতাধিক হকার। কিন্তু তাদের সামান্য ছাড় দিতেও নারাজ ঢাকা ট্রেড সেন্টার মার্কেটের ব্যবসায়িরা। নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’কে এমনটাই জানিয়েছেন মার্কেটের ব্যবসায়ি কমিটির সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন।
আফজাল বলেন, ‘পুলিশ বা সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ চাইলে হকারদের উচ্ছেদ করতে পারে, আবার বসতেও দিতে পারে। মার্কেটের কেউ আর তাদের উচ্ছেদ করতে যাবে না। তবে আমরা আমাদের জায়গায় তাদের বসতেও দেবো না। মার্কেটের গলি এবং রাস্তাগুলো অন্তত আমরা ফ্রি রাখবো। আমি নিজেই এগুলো মনিটরিং করবো। পরবর্তীতে যাতে এ ধরনের সংঘাত নয় হয় সেদিকেও খেয়াল রাখবো।’
দুই দফা সংঘর্ষের বিষয়টি ব্যবসায়ি কমিটির পক্ষ থেকে তদন্তের কথা জানিয়ে সরকার দলীয় এই সংসদ সদস্য আরো বলেন, ‘কোনো ধরনের পক্ষপাত ছাড়াই সব কিছু খতিয়ে দেখা হবে। যেই অপরাধী হোক না কেন, তার একটা সামাজিক বিচার হবে। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।’
সমঝোতার অপেক্ষায় থাকা হকারদের একজন মো. শহীদুল ইসলাম। নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’কে তিনি বলেন, ‘সারা বছর আমরা রমজান মাসের জন্য অপেক্ষা করি। অথচ এই মাসের শুরুতেই আমাদের উচ্ছেদ করা হলো। মালামাল লুটপাট করা হলো। আমাদের এখন না খেয়েই মরতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘লাইনম্যানকে নিয়মিত চাঁদা দিয়েই আমরা এখানে ব্যবসা করি। রমজান মাসকে কেন্দ্র করে প্রতিটি হকার এখানে প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টাকা করে ইনভেস্ট (বিনিয়োগ) করেছে। যার কিছু নাই সে’ও ধারকর্জ করে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার ইনভেস্ট করেছে। সব মিলিয়ে আমাদের দুই কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়ে গেছে।’
আরেক হকার মো. রনি নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’কে বলেন, ‘সংঘর্ষের পর আমাদের নেতাদের সঙ্গে আলতাফ এমপির বৈঠক হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন এখানে থাকতে হলে- মিলতে হবে। আর আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ সোমবার দিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু এখনো তার কোনো খবর নাই। মনে হয় আমরা আর কোন ক্ষতিপূরণ পাবো না।’ রনি আরো বলেন, ‘পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আমাদের রাস্তায় বসতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে মার্কেটের পাশের ফুটপাতে বসার অনুমতি পেয়েছি। কিন্তু এত হকার এইটুকু জায়গায় কিভাবে বসবে। তার উপর ক্ষতিপূরণও পাইনি। যাদের টাকা ছিল তারা নতুন করে দোকান বানিয়ে বসেছেন।’
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী খান মোহাম্মদ বেলাল নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’কে বলেন, ‘আমরা প্রতিটি নাগরিকের সুবিধা নিশ্চিত করতে চাই। এখন ঢাকা শহরের ৬০ শতাংশ লোক ফুটপাত দিয়ে চলাচল করেন। গাড়ির সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে বহু গুণে। কিন্তু রাস্তার সংখ্যা বাড়েনি। তাই জনগণের সুবিধার কথা চিন্তা করে আমরা হকার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে থাকি।’ বেলাল আরো বলেন, ‘চলাচলের রাস্তাটা পরিষ্কার রেখে যা করার করতে হবে। যাতে সাধারণ পথচারীরা অন্তত হাঁটতে পারেন। এটা অতীতে সব হকারই মেনে নিয়েছে। তারা রাস্তায় হাঁটার জায়গা রেখেই ব্যবসা করেছে।’
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’র এক প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘যারা হকারদের মালামাল লুট করেছে, পুড়িয়ে দিয়েছে তারা অন্যায় করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে অব্যশই ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’ তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে যে সমস্যা তাতে চাইলে একদিন বা দুই দিনে পুরো শহরকে হকারমুক্ত করা সম্ভব না। এ নিয়ে আমরা কাজ করছি। আগে একটা জরিপ করে বের করছি – ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে কতজন হকার আছে। তাদের একটা তালিকা তৈরি করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/পিএসএস/এসকে/এসজি