
ঢাকা: সরকার লুটপাটে মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করার পরপরই বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিরও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জ্বালানী ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। সরকার এখন লুটপাটে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আর এ কারণেই গণবিরোধী সকল কর্মকাণ্ডে তারা লিপ্ত হয়ে পড়ছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর এমন বক্তব্যকে সন্ত্রাসী বক্তব্য বলেও দাবী করেন তিনি।
রোববার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, “গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণার সাথে সাথে এর ব্যাড ইম্প্যাক্ট খুবই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সারাদেশের মানুষ এই ঘোষণার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। ইতোমধ্যে জনস্বার্থের পরিপন্থী এই ধরনের ঘোষণায় বাসভাড়া, বাড়ীভাড়ার নোটিশ প্রদান শুরু হয়ে গেছে। দেশের শতকরা সাড়ে ৯৯ ভাগ মানুষ এই ঘোষণা প্রত্যাখান করেছে। দেশের মানুষের নিকট বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের কোন জবাবদিহিতা ও কর্তব্যবোধ নেই বলেই জনগণের ওপর জুলুম চালানো হচ্ছে, জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। যদি দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি ন্যুনতম ভালবাসাবোধ থেকে থাকে তবে গণবিরোধী ও জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট কর্মকান্ড থেকে সরে আসুন এবং অবিলম্বে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির অমানবিক ঘোষণা থেকে সরে আসুন।”
প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়ের বিএনপিকে নিয়ে বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সজিব ওয়াজেদ জয় অর্ধেক পড়াশুনা করা। আরও স্টাডি করতে হবে। তার বক্তব্য কখনো জাতিকে বিভ্রান্তি করে আবার জাতি উপভোগও করে। তার সু-শিক্ষা থাকলেও কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে তিনি গ্রেজুয়েট তা আমরা জানি না। কানাডার আদালতের রায়ের বিষয়ে তিনি পুরু বিষয়ের গভীরে যাননি। সেই রায়ে যে আওয়ামী লীগকেও একটি সন্ত্রাসী দল ও বাংলাদেশের রাজনীতি যে সহিংসপরায়ণ সে বিষয় তিনি উল্লেখ করেননি। এই যে ফাস্ট স্টাডি। অর্ধেক পড়াশুনা করা। যা থেকে মানুষের মধ্যে একধরনের ভিন্ন ধারণা সৃষ্টি হয়। আমরা মনে হয়, প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জয়কে আরো পড়াশুনা করে আশা উচিত।
আগুন বোমা নিক্ষেপকারীদের বিচার করা হবে জয়ের এমন বক্তব্যেও সমালোচনা করে তিন বলেন, সরকার সবকিছু নিজের করে নিয়েছে। আওয়ামী লীগী বিচার করতে চাইলে করতে পারবে। দেশের সব কিছু এখন আওয়ামী লীগের অধীনে। কিন্তু ন্যায় বিচার হলে সব প্রমাণ হবে কারা দোষী আর কে নির্দোষী।
গণতন্ত্রের ভিন্নমত থাকতে পারে কিন্তু গণতন্ত্র মানে ডান্ডাতন্ত্র এটা শেখ হাসিনাই প্রথম প্রচলন করেছে বলেও মন্তব্য করেন রিজভী।
নির্বাচন কমিশনার সম্পর্কে তিনি বলেন, এই লোক নিরপেক্ষ নয়, এর দ্বারা নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় তার প্রমাণ বাকেরগঞ্জ নির্বাচন। এই হুদা কমিশন দিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হবে তা বুঝায় যায়।
এসময় আগামী কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী কে হচ্ছে সাংবাদিকদের এমন প্রাশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে কুমিল্লার সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তার পক্ষে বিএনপির নেতাকর্মীদের কাজ করতেও বলা হবে।
সড়ক দূর্ঘটনা নিয়ে তিনি বলেন, “সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো এখন মৃত্যুর মিছিল ও আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দূর্ঘটনার বলি হচ্ছে একেকটি তাজা প্রাণ। দিনের পর দিন সড়কে দূর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেলেও তাতে টনক নড়ছে না সরকারের। গতকালও ঢাকার নয়াবাজার এলাকায় যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় সাদিয়া হাসান নামে ২২ বছরের এক মেডিকেল ছাত্রী নিহত হয়েছেন। এভাবে প্রতিদিনই দেশের সড়কে মহাসড়কে ভয়াবহ দূর্ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। বিরোধী দল দমন এবং লুটপাট, দখলবাজী, টেন্ডারবাজীতে ব্যস্ত থাকার কারনে বর্তমান গণবিচ্ছিন্ন ও জবাবদিহিহীন সরকারের সড়ক দূর্ঘটনা সামাল দিতে কোন মাথাব্যথা নেই। গত জানুয়ারী মাসেই সারাদেশে সড়ক দূর্ঘটনায় ৪১৬ জন নিহত এবং এক হাজার ১২ জন আহত হয়েছেন। গত ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারীতে সড়ক দূর্ঘটনা বেড়েছে ৬৯টি। সড়ক দূর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রায় বাংলাদেশ সই করলেও সুনির্দিষ্ট কোন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে না। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে বলে সরকার দাবি করলেও বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। পাল্লা দিয়ে যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। সড়কগুলোতে ফিটনেসবিহীন গাড়ীর সংখ্যাধিক্য সমগ্র দেশবাসীকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রেও কোন নিয়ম-নীতিকে তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। যার ফলে সড়ক দূর্ঘটনা রোধ অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনি সম্পাদক রুহুল কদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, যুবদলের সহ-সভাপতি মর্তাজুল করিম বাদরু প্রমুখ।
প্রতিবেদন: শেখ রিয়াল, সম্পাদনা: জাবেদ