
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র রচয়িতা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী আর নেই। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোরে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে একটি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন আলোচিত এই লেখক ও সাংবাদিক।
তিনি বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন বলে তাঁর পরিবারের একাধিক ঘনিষ্ঠজন বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী, স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিবনগর সরকারে মাধ্যমে নিবন্ধিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা সাপ্তাহিক জয় বাংলার প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ছিলেন।
গাফফার ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার গ্রাম উলানিয়ার চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৫০ সালেই দৈনিক ইনসাফ পত্রিকায় তিনি পরিপূর্ণভাবে কর্মজীবন শুরু হয়। ১৯৫১ সালে দৈনিক সংবাদ প্রকাশ হলে সেখানে অনুবাদকের কাজ নেন।
১৯৫৩ সালে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের মাসিক সওগাত পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন গাফফার চৌধুরী। এ সময় তিনি ‘মাসিক নকীব-ও সম্পাদনা করেন।
একই বছর তিনি আবদুল কাদির সম্পাদিত দিলরুবা পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন। পরে ১৯৫৬ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী সম্পাদক নিযুক্ত হন।
১৯৫৮ সালে আবদুল গাফফার চৌধুরী দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার রাজনৈতিক পত্রিকা চাবুকের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান।
১৯৬২ সালে তিনি দৈনিক জেহাদের বার্তা সম্পাদক পদে যোগ দেন। ১৯৬৩ সালে সাপ্তাহিক সোনার বাংলার সম্পাদক হন।
পরের বছর ১৯৬৪ সালে সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায় নামেন এবং অণুপম মুদ্রণ নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। তবে দু’বছর পরই আবার ফিরে আসেন সাংবাদিকতায়।
১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনের মুখপত্র হিসেবে দৈনিক আওয়াজ বের করেন। ১৯৬৭ সালে আবার তিনি দৈনিক আজাদে ফিরে যান সহকারী সম্পাদক হিসেবে।
১৯৬৯ সালে পত্রিকাটির মালিকানা নিয়ে সহিংস বিবাদ শুরু হলে তিনি আবার দৈনিক ইত্তেফাকে যোগ দেন।
১৯৬৯ সালের পয়লা জানুয়ারি ইত্তেফাক সম্পাদক মানিক মিয়া মারা গেলে তিনি আগস্ট মাসে হামিদুল হক চৌধুরীর অবজারভার গ্রুপের দৈনিক পূর্বদেশে যোগ দেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সপরিবারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলা হয়ে কলকাতা পৌঁছান। সেখানে মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র সাপ্তাহিক জয়বাংলায় লেখালেখি এবং কলকাতায় দৈনিক আনন্দবাজার ও যুগান্তরে কলামিস্ট হিসেবে কাজ করেন।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দৈনিক জনপদ বের করেন।
তিনি ১৯৭৪ সালের অক্টোবর মাসে লন্ডনের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। এরপর তার প্রবাস জীবনের ইতিহাস শুরু হয়। বিলেত যাওয়ার পর প্রথম দিকে তিনি বিভিন্ন গ্রোসারি দোকানে কাজ করেন।
এরপর ১৯৭৬ সালে তিনি বাংলার ডাক নামে এক সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদনা করেন। ‘সাপ্তাহিক জাগরণ’ পত্রিকায়ও তিনি কিছুদিন কাজ করেছেন।
১৯৮৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি সাতজন অংশীদার নিয়ে নতুন দিন পত্রিকা বের করেন। এরপর ১৯৯০ সালে নতুন দেশ এবং ১৯৯১ সালে পূর্বদেশ বের করেন।
বাংলাদেশে তিনি আওয়ামী লীগ পন্থী কলামিস্ট হিসাবে পরিচিত এবং সমালোচিত। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ প্রচারক হিসাবে তিনি রাজনৈতিক বিষয়াবলী ব্যাখ্যা করে থাকেন বলেও উল্লেখ রয়েছে মুক্ত বিশ্বকোষে।