
ঢাকা: সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছে র্যাব। মঙ্গলবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের এএসপি মহিউদ্দিন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে জমা দেন। পরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য ২ মে দিন ধার্য করেন আদালত।
আদালত সূত্রে জানা গেছে গত পাঁচ বছরে ৪৭ বার সময় নিয়েও আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা র্যাব। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসে র্যাবকে ২১ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন আদালত। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার মামলার তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় তদন্ত সংস্থা।
এদিকে দীর্ঘ পাঁচ বছরে সাগর-রুনির মৃত্যুরহস্য উন্মোচিত না হওয়ায় ভেঙে পড়েছেন এই সাংবাদিক দম্পতির পরিবারের সদস্যরা। তাদের ধারণা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তি জড়িত থাকার কারণেই এ মামলার তদন্তে গাফিলতি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে অবশ্যই এতদিনে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়ে যেতো।
এর আগে র্যাবের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও হাত-পা বাঁধার রশিসহ বিভিন্ন আলামত এবং গ্রেফতারকৃত ও সন্দেহভাজনদের সংগ্রহকৃত ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে। সেগুলোর প্রতিবেদন হাতে পেলেই মামলার রহস্য উদঘাটিত হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সেসব প্রতিবেদন হাতে পেয়েছে তদন্ত সংস্থা র্যাব। কিন্তু সেখান থেকে পাওয়া দু’জন অজ্ঞাত পুরুষের ডিএনএ বহনকারী ব্যক্তি এখনো শনাক্ত হয়নি। এছাড়া সাগর-রুনির চুরি যাওয়া ল্যাপটপও উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সারোয়ার সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি দম্পতি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের নিজ বাসায় খুন হন। এ ঘটনার পর রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ওই থানার এক উপ-পরিদর্শক (এসআই)। চার দিন পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্ত ভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে ডিবি রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পরে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় নিহত রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমান, বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, পলাশ রুদ্র পাল ও আবু সাঈদকে।
তাদের রিমান্ডে নিয়ে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করলেও কোন তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি তদন্ত সংস্থা। পরে র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, সাগর-রুনির বাসার পলাতক দারোয়ান এনামুল হক ওরফে হুমায়ূনকে ধরতে পারলে হত্যাকাণ্ডের রহস্যজট খুলে যাবে। তাকে ধরতে ১০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি এনামুলকে গ্রেফতার করা হলেও খোলেনি রহস্যজট।
প্রতিবেদন: প্রীতম, সম্পাদনা: সজিব