
ঢাকা: গুপ্তহত্যা রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের প্রথম দিনে সারাদেশে অন্তত সহস্রাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। এ অভিযান আরো ছয়দিন চলবে। তবে অভিযানে আটকদের অধিকাংশই বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মী, যাদের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা ছিলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা নিউজনেক্সটবিডি ডটকমকে জানান, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এই অভিযান শুরু হয়। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত সারাদেশে এক হাজারের মতো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সন্দেহভাজন জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের বিদ্যমান তালিকা ধরে এই অভিযান চালানো হচ্ছে।
সম্প্রতি হঠাৎ করেই দেশে গুপ্তহত্যা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) একেএম শহিদুল হক বৃহস্পতিবার এই সাঁড়াশি অভিযানের ঘোষণা দেন। ঢাকায় পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে এই যৌথ অভিযানের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।
আইজিপি বলেন, দেশে সম্প্রতি যেসব সহিংসতা ঘটছে তার সঙ্গে `হোমগ্রোন` বা দেশীয় জঙ্গিরা জড়িত রয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। তাই এদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যাপকভাবে দেশব্যাপী একটি অভিযান শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রমজান মাসের কারণে আপাতত এই অভিযানের মেয়াদ হবে এক সপ্তাহ। এক সপ্তাহ পর মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না তা বিবেচনা করা হবে।
এদিকে এই অভিযানকে বিএনপি দমনের কৌশল বলে আখ্যা দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার সকালে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে গাইবান্ধায় গুলিবিদ্ধ বিএনপি প্রার্থীকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সাঁড়াশি অভিযানের কথা বলে ইতিমধ্যেই তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা বেড়ে গেছে। ৯ জন ইতিমধ্যেই বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। এটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের সেই কৌশল যেই কৌশল করে তারা এখানে জনগণের আন্দোলনকে দমিয়ে রেখেছিল।’
অভিযানের অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকার প্রতিটি রাস্তার মোড়ে মোড়ে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের এ পর্যন্ত অনেকজন আটকের তথ্য জানালেও সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা উল্লেখ করেননি।
জেলা প্রতিনিধি ও স্থানীয় পুলিশ সূত্রে এ পর্যন্ত দেশের চট্টগ্রাম, খুলনা, কিশোরগঞ্জ, মাগুরা, রাজশাহী, যশোর, বাগেরহাট, গাইবান্ধা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, বরিশাল, দিনাজপুর, রংপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আটকের খবর পাওয়া গেছে।
কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে জামায়াত-শিবিরের পাঁচ কর্মীসহ বিভিন্ন মামলায় ৬৭ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) জয়নুল আবেদীন জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত জেলার ৬টি থানার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় জামায়াত-শিবিরের পাঁচ কর্মীসহ ৬৭ জনকে আটক করা হয়।
বরিশাল: জঙ্গি দমনে সাড়াশি অভিযানে বৃহস্পতিবার রাতে জেলা পুলিশের অভিযানে ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার এসএম আক্তারুজ্জামান জানান, পুলিশ হেডকোয়াটার্সের নির্দেশ অনুযায়ী তারা বৃহস্পতিবার রাত থেকেই অভিযানে নেমেছেন।
সাঁরাশি অভিযানে কেবল জঙ্গি সংশ্লিষ্টরাই নয়; বড় ধরনের অপরাধী, যারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরিতে নাশকতা করতে পারে, তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী এবং মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
মুলাদী থানা পুলিশ ১ বছরের সাজাপ্রাপ্ত এক আসামিকে, আগৈলঝাড়ায় বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত ৪ জন, মেহেন্দিগঞ্জে ৭ জন, হিজলায় ৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত একজন আর ওয়ারেন্টভুক্ত দু’আসামি এবং বাকেরগঞ্জে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মাগুরা: মাগুরার চার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে ২৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। বৃহস্পতিবার (৯ জুন) রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এ অভিযান চালানো হয়। গ্রেফতারকৃতরা সবাই বিভিন্ন মামলার আসামি বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এহসান উল্লাহ।
সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে নাশকতার আশঙ্কায় জামায়াতের এক কর্মীসহ ৩৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত জেলার আটটি থানায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে জামায়াতের একজন ও বিভিন্ন মামলার ৩৪ জন আসামি রয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ডিআইও (পরিদর্শক) এসআই কুমকুম জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে জেলাব্যাপী পুলিশের বিশেষ অভিযানে সাতক্ষীরা সদর থানায় ১০ জন, কলারোয়ায় সাতজন, কালিগঞ্জে দুজন, তালায় দুজন, শ্যামনগরে পাঁচজন, আশাশুনিতে দুজন, দেবহাটায় পাঁচজন ও পাটকেলঘাটায় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অভিযান চালিয়ে ৪ জামায়াত কর্মীসহ ২৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার ভোরে এ অভিযান পরিচালনা করে মহেশপুর থানা পুলিশ।
রংপুর: রংপুরে বিশেষ অভিযান চালিয়ে নাশকতার মামলায় চার্জশিটভুক্ত ৯০ আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত রংপুরের আট উপজেলায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানায়, গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে নাশকতা,চুরি ও ডাকাতিসহ সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা রয়েছে।
রংপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার (এসপি) আবদুল্লাহ আল ফারুক সাংবাদিকদের জানান, রমজান মাসে সন্ত্রাসীরা যাতে কোনও ধরনের অপরাধ কার্যক্রম না চালাতে পারে তার জন্য অভিযান অব্যাহত থাকবে। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে।
মেহেরপুর: মেহেরপুরে ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে পুলিশের দাবি সবাই বিভিন্ন মামলার আসামি। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে নিয়মিত মামলায় সাতজন, সিআর মামলায় দুজন ও ১৫১ ধারায় একজন আসামি রয়েছেন। মেহেরপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) হামিদুল আলম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নাটোর : বিশেষ অভিযানের অংশ হিসেবে নাটোরে ২৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া প্রায় ৪০টি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুনশী শাহাবুদ্দিন জানান, র্যাব ও পুলিশের বিশেষ অভিযানের অংশ হিসেবে রাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত ও পলাতক আসামিসহ সন্দেহজনকভাবে ২৭ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের শুক্রবার আদালতে হাজির করা হবে।
এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে মোটরসাইকেলে অতিরিক্ত যাত্রীবহন, বৈধ কাগজপত্র না থাকা ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাচল করার অভিযোগে প্রায় ৪০টি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। সপ্তাহব্যাপী এ বিশেষ অভিযান চলবে বলেও জানান তিনি।
দিনাজপুর: দিনাজপুরের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে দায়িত্বরত কনস্টেবল মোশাররফ হোসেন জানান, জেলার ১৩ উপজেলা থেকে জামায়াত-শিবিরের দুই কর্মীসহ ১০০ জনকে আটক করা হয়েছে দুপুর পর্যন্ত। জামায়াত-শিবিরের দুই কর্মী ছাড়া অন্যরা বিভিন্ন মামলার আসামি।
রাজশাহী: রাজশাহীতে আটক হয়েছেন ৩৪ জন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত তাদের আটক করা হয়।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও রাজপাড়া থানা জোনের সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম বলেন, নগরীতে মোট ৩১ জন আটক হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৫ জন বিভিন্ন মামলার আসামি। অপর ১৬ জন মাদক বিক্রেতা ও মাদকসেবী। বিশেষ অভিযানের প্রথম দিনে জঙ্গি সংশ্লিষ্ট কাউকে রাজশাহীতে পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
রাজশাহীর অতিরিক্তি পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জানান, দুর্গাপুরে বিশেষ অভিযান চালিয়ে হত্যা মামলার দুই আসামি ও পুঠিয়ায় সাজাপ্রাপ্ত এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছেন তারা।
টাঙ্গাইল: পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকা সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, জেলার ১২টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অভিযানের প্রথম দিন দুপুর পর্যন্ত ৬৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে বিভিন্ন মামলার আসামি রয়েছেন।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/পিএসএস/জাই