
শেখ রিয়াল, ঢাকা: বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি একটি। তবে দলটি ক্ষমতার বাইরে টানা দশ বছর। এই দশ বছরে কোনো পরিকল্পনা বা সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেনি দলটি। সম্প্রতি বিএনপির সিনিয়র নেতারা দলের জন্য যে কয়টি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তার কোনোটিই এখন অবধি ফলপ্রসূ হয়নি।
নতুন ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বিএনপি যে বিষয়টিকে ইস্যু করে সামনে এগুতে চায়, সেটিই ব্যর্থ হয়। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের জনপ্রিয়তা দেখানোর যে প্রয়াশ করেছিল তাও ব্যর্থ হলো ২২ ডিসেম্বর নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে তূণমূলের অনেক নেতাই ভেবেছিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে দলের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে সরকারকে তাদের প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে বাধ্য করা। কিন্তু নির্বাচনে ভরাডুবির কারণে তা আর সম্ভব হচ্ছে না।
এখন কিছুটা পরিকল্পনাহীন হয়ে পড়েছে দলটি। তাদের সামনে এখন আর কোনো বিষয় নেই যা নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলবে। প্রতিবার নির্বাচনের মাঝ পথে তারা কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করে এবং নির্বাচন পরবর্তীতে, সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয় বলে অভিযোগ আনলেও এবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর থেকে এখন পরযন্ত সরকার বা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তেমন জোরালো কোনো অভিযোগ আনেনি বিএনপির কোনো নেতা।
বিএনপির সামনের পরিকল্পনা কি দলটির কয়েকজন সিনিয়র নেতার কাছে জানতে চাইলে তারা কিছু বলতে পারেন না বলে জানান।
সিনিয়র নেতাদের কয়েকজন বলেন, কেন্দ্র থেকে এখন অবধি কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেন বিএনপি হারলো তার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করা হবে। কোনো ভুল থাকলে তা দ্রুত সংশোধন করা হবে বলেও জানানা তারা।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নাসিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিএনপির গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন আংশিক ভাবে সফল হয়েছে। আমি নাসিক নির্বাচনকে ভিন্ন ভাবে দেখি। নারায়ণগঞ্জ একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এটির ফলাফল দিয়ে জাতীয় নির্বাচন বিচার করা যাবে না। নাসিক নির্বাচনে জাতীয় ইস্যু ছিল না। বাহ্যিক দিক দিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও ভিতরে কী হয়েছে তা তদন্ত করতে হবে। তদন্ত করে আপনাদের বলবো।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘নাসিক নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছিল না। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী অনেক সুবিধা পেয়েছেন। তার পরও অনেকেই বলছেন নির্বাচন সুষ্ঠ হয়েছে। সেখানে যদি আওয়ামী লীগের প্রার্থী সত্যিকার জনগণের রায়ে নির্বাচিত হয়ে থাকেন, তাহলে সরকারের উচিৎ অনতি বিলম্বে নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে তাদের জনমত যাছাইয়ে জাতীয় নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করা।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মো: নাসির উদ্দিন বলেন, ‘বিএনপি জনগণের দল। জনগণই বেগম খালেদা জিয়ার একমাত্র ভরসা। ভবিষ্যতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি জনগণের উপর ভর করে এবং জনগণের সহযোগিতায় ক্ষমতায় যাবে ইনশাল্লাহ। বিএনপি কারো দয়ায় নির্ভর করে ক্ষমতায় যেতে চায় না।’
তবে নাসিক নির্বাচনে বিএনপির পরাজয় সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘বিএনপি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল। তবে নির্বাচনী খেলায় তারা ভুল প্লেয়ার সিলেক্ট করেছিল। তাদের এই প্লেয়ার ছিল দুর্বল।’
নিরপেক্ষ সার্চ কমিটি গঠন এবং নির্বাচন কমিশন নিয়ে রাষ্ট্রপতির রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা শেষে আশানুরুপ ফলাফল না আসলে এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে নামতে পারে বলেও জানান অনেক নেতা।
সম্পাদনা: জাহিদ