
ঢাকা: যেকোন চাকরির জন্য আমাদেরকে সিভি জমা দিতে হয়। কিন্তু আমরা অনেকেই নিজের অজান্তে সিভির মধ্যে অনেক ভুল করে ফেলি। সচারচর সিভিতে আমরা যে সকল ভুল করে থাকি, নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলঃ-
১। বড় ভাইয়ের সিভি নিয়ে তার মধ্যে নিজের নাম ঠিকানা বসিয়ে সিভি তৈরিকে আমি বলবো প্রথম ভুল। সিভি কপি করার সময় অনেকের পিতার নাম, মোবাইল নম্বর ওই বড় ভাইয়েরটাই থেকে যায়।
২। সিভি সাহিত্যচর্চার জায়গা নয়। মনে রাখবেন, সিভি যত বড়, সিভি নির্বাচিত না হওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি। ফ্রেশার থেকে শুরু করে ৬-৭ বছর যারা চাকরী করছেন, তাদের সিভি হবে ২ পেজ। ৬-১৫ বছর যাদের অভিজ্ঞতা তাদের সিভি হবে তিন পেজ। প্রতি ১০ বছরের কাজ লিখতে একটি পেজ পাবেন।
৩। এমন কোন কম্পিউটার স্কিল দিবেন না যা আপনি জানেন না। এমন কোন সফটওয়ার স্কিল দিবেন না যা আপনি জানেন না।
৪। সিভিতে নামের পর বর্তমান ঠিকানা লিখতে হয়। বর্তমান ঠিকানা হচ্ছে আপনি যেখানে রাতে ঘুমান সেই ঠিকানা। বাবার বাড়ি, স্থায়ী ঠিকানা, শ্বশুর বাড়ির ঠিকানাও সিভিতে পাওয়া যায়। এগুলো থাকলে হবে না।
৫। ফোন নম্বরে কান্ট্রি কোড না দেওয়া বিরাট ভুল।
৬। সিভিতে অনেকেই মেইল আইডি পাওয়া যায়ঃ [email protected] , [email protected] নিশ্চিত থাকতে পারেন, এরকম আজে বাজে মেইল আইডি থাকলে কখনই ইন্টারভিউয়ের ডাক পাবেন না।
৭ । স্কাইপ আইডি অবশ্যই সিভিতে দিয়ে রাখুন। কোন রিক্রুটারের সময় নেই, আপনাকে খুঁজে বের করে আপনার সাথে অনলাইনে ইন্টারভিউ অ্যারেঞ্জ করবে। হোয়াটসঅ্যাপ ও ভাইবারও একটিভ রাখার চেষ্টা করুন।
৮। লিঙ্কডইন রেডি রাখবেন সব সময়। যে কেউ যেন ভিজিট করলেই আপনার সম্পর্কে জেনে যায়।
৯।একই সিভি চালিয়ে দিচ্ছেন সেলস, মার্কেটিং, ব্রান্ডিং, একাউন্ট যে কোন চাকরীর জন্য। যা কহকনই কাম্য নয়।
১০। স্কুলের ছবি দিয়ে চাকরির জন্য আবেদন করা মস্ত বড় ভুল। সম্প্রতি তোলা কোন ছবি দেয়ার চেষ্টা করুন।
১১। অনেকে ক্যারিয়ার অবজেক্টিভের মধ্যে “Seeking”, “Need”, “Lookng or Postion”, “Good Organization” এই সব ওয়ার্ড ব্যবহার করেন। এগুলো মারাত্মক ভুল। অবজেক্টিভ হতে হবে শুধুই কাজ করার মেন্টালিটি। চাই, প্রয়োজন, দেন, খুঁজছি এগুলো দুর্বলদের কথা।
১২। গ্রামার ও বানান ভুল সিভির মারাত্মক আরেকটি ভুল। অনেকে বড় ভাইয়ের সিভিতে কি লিখা আছে তার বাংলা অর্থও জানেন না অথচ সেই সিভি পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
১৩। সিভির ফন্ট, বানান, মার্জিন, স্টাইল সব সময় একই রকম হতে হবে। এক এক জায়গায় এক এক ফন্ট, এক এক স্টাইল হলে বাজে দেখায়।
১৪। সিভির স্টেটমেন্ট গুলো SMART না হওয়া চাকরিজীবীদের সিভির খুব মারাত্মক ভুল। SMART দ্বারা বুঝাচ্ছে S= Specific (সুনির্দিষ্ট) M=Measurable(পরিমাপযোগ্য) A=Achievable (সাধনযোগ্য) R= Realistic (বাস্তব) T=Time Bounded (নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে)। আগের একটি পর্বে SMART সম্পর্কে লিখেছিলাম। দয়া করে পড়ে নিবেন।
১৫। নিজের ব্যাপারে বাড়িয়ে এমন কিছু লিখা যাবে না যেটা ডিফেন্স দিতে পারবেন না।
১৬। সিভিতে স্ট্রং ওয়ার্ড না থাকা আরেকটি দুর্বল দিক। গুগল করে স্ট্রং ওয়ার্ড বসিয়ে নিন সিভিতে।
১৭। ফ্রেশাররা সিভিতে ফুটিয়ে তুলতে পারে না যে তারাও কাজ করেছে ও কাজ জানে। তাই এই ব্যাপারটি সিভিতে তুলে ধরতে হবে।
১৮। শিকার করা, মাছ ধরা এই ধরনের উদ্ভট শখের কথা সিভিতে থাকা যাবে না যার সাথে কাজের কোন সম্পর্ক নেই।
১৯। সিভিতে অনেকে চাকরীরত কোম্পানির ইতিহাস লিখে ফেলেন। কোম্পানির ওয়েবসাইট অ্যাড্রেস দিয়ে দিন। যার দরকার সে জেনে নিবে।
২০। ফ্রেশারদের সিভিতে কো-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজ থাকতে হবে। চার বছরে এক বছর সকলে ছুটিই কাটান। কিছু না কিছু এই সময়ে করতে হবে।
২১। ট্রেনিং না থাকাটা সিভির আরেকটি বড় দুর্বলতা। ট্রেনিং করুন। সিভি স্ট্রং হবে। কাজে দিবে।
২২। নিজের প্রফেশনাল এক্সপার্টজ গুলো ফুটিয়ে তুলতে না পারার কারণেও সিভি রিজেক্ট হয়।
২৩। কোন কোন ক্ষেত্রে আপনি পারদর্শী এবং কোন কোন ক্ষেত্রে কাজ করতে চান উল্লেখ না করাও সিভির বড় ভুল।
২৪। ভুল তারিখ থাকা সিভির আরেকটি ভুল। অনেকে এক চাকরি থেকে অন্য চাকরিতে গিয়ে তারিখ লিখতে ভুল করেন। এই ভুল ধরা পড়লে সিভি বাদ হবে।
২৫। চাকরির গ্যাপ সিভি রিজেক্ট হওয়ার বড় কারণ। চাকরিতে গ্যাপ পড়েছে হয়তো, কিন্তু কাজতো করেছেন। কি কি করেছেন গুছিয়ে লিখুন। কাজ দিয়ে গ্যাপ পুরা করে ফেলুন।
২৬। সিভির তথ্য গুলো পর্যায়ক্রমে না সাজালেও বাদ পড়ে যেতে পারে আপনার সিভিটি। ধরুন, আপনি বিবিএ পড়ার সময় ইন্টার্নশিপ করেছেন। তার মানে ইন্টার্নশিপটা বিবিএ পড়ার একটা পার্ট। তাই আগে থাকবে বিবিএ পড়ার তথ্য, এরপর আসবে ইন্টার্নশিপ।
২৭। কত টাকা বেতন পান ও কত টাকা বেতন চান উল্লেখ করা সিভির আরেকটি ভুল। আগে হবে যাচাই বাছাই করতে হবে, সবশেষে আসবে মূল্য।
২৮। থার্ড পার্সন ব্যবহার করে সিভি লিখবেন না। She, He এগুলো লিখবেন না। আপনি সিভিতে আপনাকে পরিচয় করাচ্ছেন। তাই সব কিছু ফার্স্ট পার্সনে লিখুন।
২৯। কেন আমি সেরা? কেন আমাকেই ডাকবেন ইন্টারভিউর জন্যে? এটা যদি সিভিতে ফুটে না ওঠে, আপনি ইন্টারভিউ কল পাবেন না।
৩০। আত্মীয়-স্বজন, বেয়াই, কুটুম এদের সিভির রেফারেন্স বানাবেন না। সিভিতে দুইটি রেফারেন্স রাখুন যাদের সাথে পড়াশুনার সময় অথবা কর্মক্ষেত্রে পরিচয় হয়েছে।
৩১। ভাষাগত দক্ষতা অংশে অনেকে টেবিল তৈরি করেন। এটা খুব বাজে লাগে দেখতে। আপনি বাংলা ও কাজ চালিয়ে নেবার মত ইংরেজি জানেন। এইটুক লিখলেই হবে।
৩২। চকচক করলেই যেমন সোনা হয় না, তেমনি সিভিতে কালারিং করলেই যে সিভি চোখে পড়বে তা কিন্তু না। বরং সেটা আপনার রুচিহীনতা প্রকাশ করে। সিভি হবে সাদা কাগজে কালো লেখা।
৩৩। যাকে রেফারেন্স বানাচ্ছেন, তাদের অনুমতি নিন ও তাদের ফোন নম্বর ও ই-মেইল আইডি দিন।
৩৪। সবশেষে সাইন দিন যাতে বোঝা যায় সিভিটি আপনার। যেদিন সিভিটি পাঠাচ্ছেন, ওইদিনের ডেট দিন।
৩৫। কভার লেটার না দিলে অনেক সময় আপনার সিভি বাদ পড়ে যাবে। অনেক জায়গায় তো কভার লেটার ছাড়া আপনি আবেদনই করতে পারবেন না।
৩৬। কেউ জেপিজি ফরম্যাটে সিভি পাঠাবেন না। কারো সময় নেই, একাধিক ইমেজ নামিয়ে জোড়া দিয়ে দিয়ে আপনার সিভি দেখবে। সিভি পিডিএফে পাঠাবেন।
৩৭। যে পদের জন্য আবেদন করা হচ্ছে সেটি খামের উপর বা ই-মেইলের সাবজেক্টে না লেখা আরেকটি বড় ভুল। তাড়াহুড়ার কারনে এই ভুলটি হয়।
৩৮। সিভি অফসেটে প্রিন্ট করে পাঠানো ভালো। সব জায়গায় কৃপণতা ঠিক না।
৩৯। সিভি ও ছবি আলাদা করে পাঠাবেন না। যিনি সিভি যাচাই বাছাই করেন, উনাকে কয়েকশ সিভি যাচাই বাছাই করতে হয়। আপনার সিভির সাথে ছবি জোড়াতালি উনি কোনদিন দিবেন না।
৪০। ওয়ার্ড ফাইল কাউকে দিবেন না। এটা এডিট করা যায়। ইনফো সিকিউরিটির ব্যাপার আছে। যাকে তাকে সিভি দিবেন না।
গ্রন্থনাঃ রায়হান, সম্পাদনা: জাবেদ