Friday, June 2nd, 2023
সুবিধাবাদী নেতারা অবহেলিতর কথা বলে না
December 19th, 2016 at 6:56 pm
সুবিধাবাদী নেতারা অবহেলিতর কথা বলে না

প্রিয় বন্ধু,

কেমন আছ তুমি? ভাল আছ কি না জানি না। তোমার কিছু খারাপ হলে আমার মন কেমন করে যেন টের পায়। রাতে খারাপ স্বপ্ন দেখি। আমি আর কোনো জীবনে এ পৃথিবীতে এসে ছিলাম কিনা কে জানে? সেই জীবনে তুমি কি আমার কাছের কেউ ছিলে? নইলে এতটা আপন কেন মনে হয় তোমাকে বন্ধু।

একটা বাস্তব কথা বলি, নিজের আপনজন থেকে সবসময় ১০০ হাত দূর দিয়ে হাঁট তুমি। আপনজনকে পর করতেই তোমার আনন্দ, তাই নিজের খেয়াল নিজেই রেখো। প্লিজ নিজেকে সুস্থ রেখ। বন্ধু, এ সপ্তাহে অনেকেই জানতে চেয়েছে আগামী চিঠির বিষয় কী? আমি হেসে বলেছি আমি নিজেই কি জানি, কী বিষয় লিখতে গেলে বুঝি বন্ধুকে কী লিখতে চাই!!

বন্ধু এটা তো জরুরী না সব চিঠিতেই আমি পাণ্ডিত্য দেখাবো। আমার বন্ধুকে অর্থহীন চিঠিও তো লিখতে পারি, কী বল? গত রাতে এটুকু লিখে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম; সকালে উঠে আমাদের অফিসের রিট্রিট এ আসতে হলো আপস্টেটে, উদ্দেশ্য সুন্দর জায়গায় সুন্দর একটা বাড়ীতে বসে পেছনের বছরকে মূল্যায়ন করা ও নতুন বছরের প্লান করা। সুন্দর একটা পাহাড় ঘেরা বাংলোতে বসে আছি। প্রোগ্রাম শুরু হতে কিছু সময় বাকি আছে, ভাবলাম তোমাকে লিখি।

আমার লেখা সবসময় এ দেশে নীতি ও নির্ধারকদের সমালোচনায় মুখর থাকে। আমি কখনও নিজেদের সমাজকে কটাক্ষ করে তেমন কিছু লিখি না। আজ কিছু লিখতে হবে, গত কিছুদিন যাবত ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক হামলা বেড়ে গিয়েছে, আমাদের বাঙালি সমাজও আক্রান্ত হচ্ছে। গত সপ্তাহে রহমান নামে এক বয়স্ক বাঙালি ভাইকে মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে ঘরে ফেরার সময় এক ইন্ডিয়ান ও দুই আমেরিকান মিলে মারধর করল। কেউ বলছে এটা ঘৃণা জড়িত হামলা, কেউ বলছে ব্যক্তিগত বিষয়।

নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের মুসলিম বিদ্বেষী কথা আর নীতির কারণে এমনটি হচ্ছে বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা। ট্রাম্প ক্যাবিনেট ড্রাফ্‌ট লিখছে মুসলিম রেজিস্ট্রেশন কেমন হবে আর কতগুলো মুসলিম দেশের মানুষ এই প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত হবে—এইসব। আমাদের হিতাকাঙ্ক্ষীরা প্লান করছে বা প্রতিজ্ঞা করছে যদি এটা হয় তাহলে তারাও মুসলিম হিসাবে রেজিস্ট্রেশন করবে। আমরা মনে প্রাণে তাদের মহত্ত্বের তারিফ করি। কিন্তু প্রশ্ন হল, তাহলে কি তারা ট্রাম্প এর ঘৃণ্য নীতি মেনে নিচ্ছে? আমারা সাংগঠনিক ভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলাম—এটা শুরুর আগেই কাজ করবো, যাতে শুরুই না হয়!! যেমন কথা তেমন কাজ, আমরা গবেষণা করে এটাও জানলাম নাইন এলিভেন পর জাতীয় সুরক্ষার নামে মুসলিম রেজিস্ট্রেশন হয়েছিলো। আমি আগের এক চিঠিতে লিখেছিলাম, ৮০ হাজার মুসলিম নিবন্ধিত হয়েছিল ১৩ হাজার মানুষ বৈধ কাগজপত্র না থাকার কারণে এই দেশ থেকে বহিষ্কার হয়েছিল।

এই ঘটনার পরে মুসলিমদের নানা রকম নির্যাতন আর টার্গেট বানানো হয় এই জাতীয় সুরক্ষার নামে। ওবামা প্রশাসন এই জাতীয় সুরক্ষা মেশিনটিকে বাঁচিয়ে রেখেছে—কাজেও লাগিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন শুধু এ মেশিনটিকে আবার নতুন করে তেল দিয়ে ডিজেল দিয়ে স্টার্ট করবে। তাই আমরা অনলাইন পিটিশন চালু করি যার মাধ্যমে ওবামা প্রশাসনকে অনুরোধ করছি এ প্রোগ্রাম পুরোপুরি বাদ করে দিতে। যদি ট্রাম্প প্রশাসন মুসলিম রেজিস্ট্রি করতেও চায় তাহলে নতুন করে সব বানাতে হবে। যাতে কমপক্ষে দেড় দুই বছর সময় লেগে যাবে।

এ দুই বছরে আমাদের ঘর গোছানোর সময় পাবো, মানে আমাদের লোকদের প্রশিক্ষণ দেয়া, আমাদের বন্ধু ও আইনগত সহযোগিতার গ্রুপ পেয়ে যাবো। গত এক মাসে মুসলিম রেজিস্ট্রেশন বন্ধের জন্য সাড়ে তিন লাখ আবেদন জমা পড়েছে। গত সপ্তাহে আমরা একটি সমাবেশ ও প্রতিবাদ মিছিলসহ হোয়াইট হাউজের সামনে গিয়ে ওবামা প্রশাসনকে এ আবেদন জমা দেই। মিডিয়াতে দেখি ট্রাম্প ক্যাবিনেট ড্রাফ্‌ট বানাচ্ছে—অনেকগুলো মুসলিম দেশ এ প্রোগ্রামের আওতায় আসবে আর সেই সব দেশের সব নাগরিক—যে ধর্মের হউক না কেন—নিবন্ধিত হতে হবে।

বন্ধু, এ কথা যদি সত্যি হয় তবে মনে কর বাংলাদেশ এ প্রোগ্রামের আওতায় আসলো আর বাংলাদেশের সব মানুষ হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবাই নিবন্ধিত হতে হবে। আমাদের দেশের বিশেষ করে হিন্দু সমাজের নিউ ইয়র্কের নেতারা শুরু থেকেই ট্রাম্প এর মুসলিম বিদ্বেষী নীতির কারণে তাকে সাপোর্ট করেছে। ট্রাম্প পাশ করার পর তো মনে হয় হাতে আসমান ছুঁয়ে ফেলেছে ভাব। আমাদের জ্যাকসন হাইটস এর কাউন্সিল মেম্বার ড্যানিয়েল ড্রম এর নেতৃত্বে এক ট্রাম্প বিরোধী সমাবেশ পণ্ড করতে তারা ট্রাম্প এর সাপোর্টে মিছিল নিয়ে হাজির হয়েছিল। এর পরের সপ্তাহে তারা ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে সমাবেশ করে বাংলাদেশের নির্যাতিত হিন্দুদের জন্য ট্রাম্প এর কাছে সাহায্য চায়।

বন্ধু, আমি বানিয়ে বলছি না, নাছিরনগরের ঘটনার বিচার চেয়ে তারা এই সমাবেশ করেছে। অনেকের হাতে সাইন ছিলো—হিন্দু নির্যাতন বন্ধে ট্রাম্প আমাদের ভরসা। ওই  সমাবেশে বিতর্কিত ইসরাইল এর নাগরিক মেন্দি সাফাদিও যোগ দেয়। বাংলাদেশ সহ এখানের বাংলা সংবাদপত্রে ছবিসহ এ খবর প্রকাশ হয়। বাংলাদেশি হিন্দু নেতারা এই সব সমাবেশ বা লবিংগুলি প্রায়ই করে থাকে। এই সব কর্মকাণ্ড দেশের বিরুদ্ধে গেল না এখানে বাংলদেশি সমাজের বিরুদ্ধে গেল, তা তাদের জানার বিষয় নয়। সাধারণ হিন্দু জনগোষ্ঠী হয়তো এসবের খবরই জানে না। হিন্দু নেতরা ভুলেও তাদের সমাজের কাগজপত্র বিহীন মানুষ কম মজুরিতে কাজ করা শ্রমিকদের কথা ভাবে না, তারা ভুলে যায় তাদের মতো সুবিধাবাদীরা ট্রাম্পের সময় ভালো থাকবে বাকিরা নয়। অন্য হিন্দু জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশি মুসলিমদের মতোই মূল্য দিতে হবে।

বন্ধু, অফিসের রিট্রিট থেকে ফিরে এসে পরের দিন যাচ্ছি সউদি-আরব, ওমরাহ হজ্ব করতে। যখন কাগজপত্র ছিল না—নিয়ত করেছিলাম কাগজ হলে ওমরাহ্‌ করতে যাবো। কাগজ হয়েছে চার বছরের ওপর—এখনো যেতে পারিনি। আমার বন্ধু রিমাকে বলেছিলাম, এই কথা আফসোস করে, এও বলেছিলাম মহিলারা মাহরোম আত্মীয় ছাড়া যেতে পারে না, তাই যাওয়া হচ্ছে না। রিমা গবেষণা করে বের করলো বয়স ৪৫ এর উপর হলে মাহরোম লাগে না। রিমা, ওর স্বামী শাহিন, মেয়ে শাপলাকে নিয়ে এ বছর যাবে তাই সঙ্গে আমার জন্য সব ব্যবস্থা রিমাই করলো। আমি শুধু লাগেজ নিয়ে প্লেনে উঠলাম।

রিমা, তুমি আমার জীবনে আল্লাহর দেয়া উপহার। তোমরা না থাকলে জীবন হয়তো কাটত কিন্তু জীবনের যে একটা স্বাদ আছে তা-ই জানা হতো না। আমি মনে করি জন্মের সময় যে সম্পর্কগুলো নিয়ে এসেছি, তার বাইরে যে সম্পর্ক আমি বানিয়েছি তার মধ্যে অন্যতম বন্ধুত্ব। এ সম্পর্ক একটি গাছের মতো, নিজের লাগানো গাছটিকে যেমন মানুষ পানি দিয়ে যত্ন করে বাঁচিয়ে রাখে বড় করে বন্ধুত্ব তেমনই। আমার গাছের যদি মূল শেকড় বলে কিছু থাকে অবশ্যই তা তুমি রিমা আইরিন সায়মা নূপুর। বন্ধু, প্লেনে বসে লিখছি, সকালে উঠে টার্কি তারপর জেদ্দার ফ্লাইট। টার্কিতেই ইহরাম বাঁধতে হবে, তখন আর লেখা যাবে না। আজ এখানেই থাক, পরের চিঠি সৌদি থেকে লিখব।

ভাল থাক বন্ধু, ভাল থাকুক দেশ ও দেশের মানুষ।

ইতি তোমার বন্ধু
যাকে তুমি কোন নামেই ডাকো না

লেখক: মানবাধিকার কর্মী


সর্বশেষ

আরও খবর

নিউ ইয়র্কের চিঠি- ৩৭

নিউ ইয়র্কের চিঠি- ৩৭


মানবিক হও!

মানবিক হও!


সহমর্মিতার জয় হোক

সহমর্মিতার জয় হোক


মহামারীর এই সময়ে মানুষের পাশে থাকুন

মহামারীর এই সময়ে মানুষের পাশে থাকুন


আসছে শুভদিন!

আসছে শুভদিন!


আমাদের ঝালমুড়ি দাদা ও গরীবের শ্রেণী সংগ্রাম

আমাদের ঝালমুড়ি দাদা ও গরীবের শ্রেণী সংগ্রাম


জন্মভূমির টান মানসিক কষ্টে ফেলে দেয়

জন্মভূমির টান মানসিক কষ্টে ফেলে দেয়


‘মুসলিম সমাজের বিভাজন বন্ধ করুন’

‘মুসলিম সমাজের বিভাজন বন্ধ করুন’


আজ জুইস-মুসলিম এক কাতারে দাঁড়িয়েছে

আজ জুইস-মুসলিম এক কাতারে দাঁড়িয়েছে


সর্ব পর্যায়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে

সর্ব পর্যায়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে