
ঢাকা: সেই ভয়াল ১৫ নভেম্বর মঙ্গলবার। ২০০৭ সালের এই দিনে সুপার সাইক্লোন সিডর আঘাত হানে উপকূলীয় এলাকায়। সিডরের আট বছর পেরিয়ে গেলেও এর স্মৃতিচিহ্ন আজও বয়ে চলেছে প্রতিটি জনপদের লোক। আজও উপকূলের মানুষ সিডরের ভয়াবহতা বয়ে বেড়াচ্ছে। সিডরের অগ্নিমূর্তির কথা মনে করে অনেকে এখনো আঁতকে ওঠে নিজের অজান্তে।
২০০৭ সালের ১৪ নভেম্বর সারা দেশের আকাশ ছিল মেঘলা। আবহাওয়াবিদরা প্রথমে ৫ নম্বর সংকেত দিতে থাকলেন। রাতে তা ৮ নম্বর বিপদ সংকেতে গিয়ে পৌঁছায়। ১৫ নভেম্বর সকালে ঘোষণা করা হয় সিডর নামের ঘূর্ণিঝড় এগিয়ে আসছে বাংলাদেশ উপকূলে। দুপুর নাগাদ তা বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করবে। ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত।
এদিকে আবহাওয়া বিভাগের ১০ নম্বর সতর্ক সংকেত শুনে সচেতন কিছু মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে শুরু করলেও বেশির ভাগ মানুষ থেকে যায় নিজ বাড়িতে। তাদের ধারণা ছিল, কত ঝড়ই এলো গেলো, এবারেও তাদের কিছু হবে না। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিডর আঘাত হানলো উপকূলীয় এলাকায়।
নিমেষেই উড়ে গেল ঘর-বাড়ি, গাছ-পালা। বঙ্গোপসাগরের সব পানি যেন যমদূত হয়ে ভাসিয়ে নিল হাজার হাজার মানুষ। মাত্র কয়েক মিনিটে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল গোটা এলাকা। পরের দিন দেখা গেল চারদিকে শুধুই ধ্বংসলীলা। উদ্ধার করা হলো লাশের পর লাশ। দাফনের জায়গা নেই, রাস্তার পাশে গণকবর করে চাপা দেওয়া হলো বহু হতভাগার লাশ। স্বজন আর সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেল উপকূল এলাকার কয়েক লাখ মানুষ।
সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৩০ জেলার ২০০ উপজেলা। সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা বলা হয় ২২১৭ জন। নিখোঁজ হন ১৫৬ জন। ৩০ হাজার ৪৯৯ টি গবাদী পশু ও ৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৫৯ টি হাঁস-মুরগী মারা যায়। ২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬১ টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সম্পূর্ণ গৃহহীন হয়ে পড়ে ৭৭ হাজার ৭৫৪ টি পরিবার। তবে বেসরকারিভাবে হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি।
ভয়াল সিডরের স্মৃতিতে এখনো শিউরে ওঠেন উপকূলের মানুষেরা। মহাবিপদ সংকেতের কথা শুনে আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন।
গ্রন্থনা ও সম্পাদনা: মাহতাব শফি