
ঢাকা: জ্বালাতন করা যায় এমন মানুষের বড্ড অভাব আমাদের জীবনে। তবে হ্যাঁ একেবারেই যে নাই তা নয়। এই যেমন স্বপন মামা, কারণে অকারণে প্রতিদিনই বিভিন্নভাবে জ্বালিয়ে মেরেছি তাকে। টিএসসির ২য় তলায় চা দরকার, কে পাঠাবে? স্বপন মামা আছে না! মশাল জ্বালাবো কনডেন্স মিল্কের কৌটা দরকার, কার কাছে আবদার করবো? স্বপন মামা ছাড়া আর কে আছে! পকেটে কোন টাকা নেই অথচ দিনের পর দিন কে খাওয়াবে চা আমাদের? নামটা ইতোমধ্যে এতবার নিয়ে নিয়েছি আর বলার দরকার আছে বলে মনে হয় না।
কোথাও কোন কাজ নেই? স্বপন মামার দোকানে বসে চা আর ইউসুফ মামার সিগারেট এই ভাবেই পার হয়েছে জীবনের অসংখ্য দিন। এমন অনেক দিন গেছে স্বপন মামার কাছ থেকে টাকা নিয়ে রাতে বাসায় ফিরেছি। পকেটে রিকশা ভাড়া নেই জেনেও টিএসসি পর্যন্ত রিকশা ভাড়া করেছি কারণ আর কেউ না হোক স্বপন মামা অন্তত টিএসসিতে আছে এই ভরসা ছিলো মনের ভিতরে।
আমার বিশ্ববিদ্যালয় আর রাজনৈতিক জীবনের প্রায় প্রতিটি দিনেই কোন না কোনভাবে স্বপন মামার চায়ের দোকান সম্পৃক্ত হয়ে আছে। কোন সহযোদ্ধা বা ছোট ভাই-বোনের জন্মদিন উদযাপন অথবা কোন আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কোথায় নেই স্বপন মামার চায়ের দোকান। দিনের পর দিন হাসিমুখে আমাদের এই জ্বালাতন সহ্য করে গেছেন সদা হাস্যোজ্বল আমাদের স্বপন মামা, কারো স্বপন ভাই, কারো জালাল ভাই অথবা কারো স্বপন কাকু।
অনেকদিন বাদে আজকে বিকেল থেকেই টিএসসিতে উপস্থিত ছিলাম। কারণ আর কিছুই না, কিছু ছোট ভাই বোন টিএসসিতে স্বপন মামার ৩২ বছর উদযাপনের যে ডাক দিয়েছিলো সে ডাক উপেক্ষা করার সাধ্য যে ছিলো না আমার। যে কাজটি কারার সাহস আমাদের ছিলো না সেই কাজটিই করে দেখিয়েছে আমার ক্যাম্পাসের অনুজেরা। শুধু ধন্যবাদ দিয়েই শেষ করা যেত কিন্তু সেটা করলে অনেক কম করা হয় এই ছেলেপেলেগুলোর জন্যে। অনেক সময় বিরক্ত হয়েছি কিন্তু তারচেয়ে বেশি বিরক্ত করেছি হয়তো স্বপন মামাকে। ভালোবাসাটা তাতে বেড়েছে বৈ কমে নি সম্ভবত।
লেখক- মারুফ বিল্লাহ্ তন্ময়, সাবেক সভাপতি, ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাবি।
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/এসপিকে/ওয়াইএ