
ঢাকা: জয়ের জন্য বাংলাদেশের চাই ৩৩ রান, আর ইল্যান্ডের দরকার ২ উইকেট। এই যখন সমীকরণ তখন ইংল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন কেবল সাব্বির রহমান। কারণ ক্রিজে এখন স্বীকৃত ব্যাটসম্যান ওই একজনই। দিনের শেষদিকে সাব্বির-তাইজুলের দারুণ প্রতিরোধে প্রথম টেস্ট পঞ্চম দিনে নিতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ।
এদিন সাকিব আল হাসান আউট হওয়ার পর মাঠে নামেন সাব্বির। দলের রান তখন ১৪০। এসেই অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে দারুণ এক জুটি গড়েন সাব্বির রহমান। দু’জনের গড়া ৮৭ রানের অসাধারণ এই জুটিই বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে।
৭৬ বলে সাব্বির রহমান তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। যদিও এরপর মুশফিক, মিরাজ, রাব্বি দ্রুত বিদায় নিলে তাইজুলকে নিয়ে দলের হাল ধরেছেন সাব্বির। নবম উইকেটে তারা ইতিমধ্যে ১৫ রানের জুটি গড়ে ফেলেছেন।
এর আগে রোববার ইংল্যান্ডের ছুড়ে দেয়া ২৮৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই করে বাংলাদেশ। দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস ৩৫ রানের জুটি গড়েন। এরপরই ইংল্যান্ডের আঘাত। মঈন আলীর বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ৯ রানে বিদায় নেন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল।
তামিমের বিদায়ের পর মুমিনুলকে সঙ্গে নিয়ে দলের হাল ধরেন ইমরুল কায়েস। ৪৬ রানের জুটি গড়েন এ দু’জন। তবে আদিল রশিদের বলে সুইপ করতে গিয়ে রুটের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান তিনি। আউট হওয়ার আগে ৬১ বলে ৬টি চারে ৪৩ রান করেন ইমরুল।
ইমরুলের আউটের পর মাহমুদউল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে দলের হাল ধরেন বাংলাদেশের টেস্ট স্পেশালিস্ট মুমিনুল হক। দলের সংগ্রহ শতরান পার করার পর গ্যারেথ ব্যাটির দুর্দান্ত একটি বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে যান তিনি। ফলে ব্যক্তিগত ২৭ রান করে সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। মুমিনুলের বিদায়ের পর গ্যারেথ ব্যাটির দ্বিতীয় শিকার হলেন মাহমুদউল্লাহ (১৭)। তাকেও এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েই বিদায় নিতে হয়।
এরপর সাকিবকে নিয়ে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ৩২ রানের জুটি গড়ে মঈন আলীর বলে জনি বেয়ারস্টোকে ক্যাচ দেন সাকিব। আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ২৪ রান।
১৪০ রানের মধ্যে প্রথম সারির পাঁচ উইকেট হারানোর পর শঙ্কা ছিল দু’শ রানের আগেই না আবার অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ! তবে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম আর অভিষিক্ত সাব্বির রহমানের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে সে শঙ্কা কাটিয়ে জয়ের স্বপ্নই দেখা শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু টাইগারদের সে স্বপ্নে আঘাত হানেন গ্যারেথ ব্যাটি। মুশফিককে শর্ট লেগে গ্যারি ব্যালান্সের ক্যাচে পরিণত করেন তিনি।
তবে আউট হওয়ার আগে সাব্বিরকে সঙ্গে নিয়ে ৮৭ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন মুশফিক। আউট হওয়ার আগে ১২৪ বল মোকাবেলা করে ৩টি চারে ৩৯ রান করেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক।
এরপর বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজও। স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন তিনি। মিরাজ আউট হলে ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন করে মাঠে নামানো হয় কামরুল ইসলাম রাব্বিকে। যদিও দুর্ভাগ্যজনকভাবে আউট হন তিনি। ব্রডের করা বল তার পায়ে লেগে ব্যাল্যান্স ক্যাচ ধরলে তাতে আঙ্গুল তুলে দেন আম্পায়ার। ফলে শুন্য রানে বিদায় নেন রাব্বি। টেস্টে ক্রিকেটে ৪২তম খেলোয়াড় হিসেবে দুই ইনিংসেই ডাক মারলেন তিনি।
এর আগে, চতুর্থ দিন সকালে আগের দিনের আট উইকেটে ২২৮ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামে ইংল্যান্ড। ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই সাকিবের বলে দ্রুত এক রান নিতে গিয়ে রান আউট হন স্টুয়ার্ট ব্রড (১০)। মেহেদী হাসান মিরাজের দারুণ থ্রোতে বাকি কাজটুকু করেন মুশফিক। আর দ্বিতীয় নতুন বলে গ্যারেথ ব্যাটিকে (৩) এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে ফেলে ইংল্যান্ডকে ২৪০ রানেই গুটিয়ে দেন তাইজুল ইসলাম। আর এতে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৮৬।
গ্রন্থনা: তুহিন সাইফুল