
ডেস্ক: গ্লোমি সানডে গানটি অনেকের কাছেই ‘হাঙ্গেরিয়ান সুইসাইড সং’ নামে পরিচিত। হাঙ্গেরিয়ান পিয়ানো বাদক ও কম্পোজার রেজো সেরেসের অনবদ্য এক সৃষ্টি। যদিও গানটি নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। অনেকের ধারণা গানটি শোনার পর সারাবিশ্বে একশ’র বেশি মানুশ আত্মহত্যা করেছিল, কিন্তু এ অভিযোগের কোনটাই প্রমানিত নয়।
গানটি সর্বপ্রথম ১৯৩৩ সালে ভিজি-আ ভীলাগ্নাক নামে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে পল কামার ১৯৩৫ সালে হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় গানটি রেকর্ড করেন। এরপর হাল ক্যাম্প ১৯৩৬ সালে প্রথম গ্লোমি সানডে শিরোণামে গানটি ইংরেজিতে রেকর্ড করেন ও গানের কথা লেখেন স্যাম এম লিওইজ। একই বছর পাউল রবিসন নতুন করে রেকর্ড করেন ও এর কথা লেখেন ডেসমর্ন্ড কার্টার। তবে বিলি হলিডে ১৯৪১ সালে গানটির আরো একটি ভার্সন বের করলে এটি ইংরেজি ভাষাভাষী জনগণের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
১৯৩২ সালে প্যারিসে বসবাসরত অবস্থায় সেরেস প্রথম গানটি কম্পোজ করেন। তিনি তখন গান লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য চেষ্ঠা করছিলেন। মৌলিক গানটি গাওয়া হয়েছিল মূলত মেলোডি হিসেবে পিয়ানোর মাধ্যমে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে অর্থনৈতিক মন্দার সময় এ গানটি লেখা হয়েছিল। মানুষের অত্যাচার, অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও যারা অন্যায় কাজে লিপ্ত তাদের জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে এ গানে। এরকমও বলা হয়ে থাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত গানটির নির্দিষ্ট কোন কথা ছিলনা এবং ১৯৪৬ সালের পূর্ব পর্যন্ত এর কোন কপিরাইট সত্ব ছিলনা। গানটির হতাশাব্যাঞ্জক কথার জন্য সেরেস গানটির জন্য প্রকাশক খুঁজতে সমস্যায় পড়েন। ১৯৩৩ সালের শেষের দিকে গানটি শীট মিউজিকে প্রকাশিত হয়।
১৯৩৫ সালে প্রথম পাল কামার হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় গানটি রেকর্ড করেন। হাঙ্গেরিতে তার ভার্সনটি জনপ্রিয় হয়ে উঠে সেই সাথে উল্লেখযোগ্যভাবে আত্মহত্যার হার বেরে যায়। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয় যুক্তরাষ্ট্র ও হাঙ্গেরিতে কমপক্ষে ১৯ জন লোক আত্মহত্যা করে, কিছু লোক ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে তখন তাদের হাতে গানটির একটি শীট মিউজিক ভার্সন ধরা ছিল। কিছু সূত্রের তথ্য অনুযায়ী হাঙ্গেরিয়ান কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত গানটি জনসম্মুক্ষে প্রচার বন্ধ করার নিষেধাজ্ঞা জাড়ি করে।
গানটি প্রকাশের পর সেরেসের সাবেক স্ত্রী আত্মহত্যা করেন। গানটি প্রকাশের প্রায় ৩৫ বছর পর রেজো সেরেসও বুদাপেস্টে একটি ভবনের জানালা থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্ঠা করেন কিন্তু তিনি বেচেঁ যান। পরবর্তীতে একটি হাসপাতালে তিনি গলায় তার পেচিয়ে আত্মহত্যা করেন। গ্লোমি সানডে গানটি আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বিবিসি বিলি হলিডের ভার্সনটি প্রচার বন্ধ করে দিয়েছিল কিন্তু ২০০২ সালে বিবিসি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
প্রতিবেদন: মাইনুল হোসেন, প্রকাশ: তুসা