
ইলিয়াস খান, ঢাকা: ব্যাংকিং চ্যানেলে নয়, প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে। কেন এমনটি হচ্ছে? জানতে তিন দেশে যাচ্ছে বিশেষজ্ঞ দল। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই দল প্রথমে সৌদি আরব, আরব আমিরাত ও কাতার যাবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘হুন্ডির কারণ খুঁজতে একটি বিশেষজ্ঞ দল সফরে যাবে। তবে কবে যাবে সেটি এখনও ঠিক হয়নি।’
অব্যাহত ভাবে রেমিটেন্স কমে যাওয়ায় বিদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠানো ঠেকাতে এরইমধ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলো বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে। এবার হুন্ডির কারণ খুঁজতে তিন দেশ সফরে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বিশেষজ্ঞ দল।
সাম্প্রতি দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের প্রবাহ কমে গেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রেমিটেন্স কমেছে সাড়ে ১৫ শতাংশ। জানুয়ারী মাসের প্রথম ১৫ দিনে কমেছে সাড়ে চার শতাংশ। গত অর্থবছরে কমেছে আড়াই শতাংশ। রেমিটেন্স অব্যাহত ভাবে কমায় সরকারও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। এ কারণেই তারা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে।
জানা গেছে, যেসব দেশ থেকে বেশি রেমিটেন্স আসে প্রথমে সেসব দেশে যাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই দল। বর্তমানে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার থেকে বেশি রেমিটেন্স আসছে দেশে। ফলে প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি দলটি এই তিন দেশ সফর করবে। চলতি মাসেই প্রতিনিধি দলটি এই তিন দেশ সফর করতে পারেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
অবৈধ পথে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিটেন্স আসছে বলে বৈধ পথে রেমিটেন্স কমছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। কি কারণে রেমিটেন্স কমছে তা খতিয়ে দেখতে দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে অর্থমন্ত্রণালয়। হুন্ডি প্রবণতা, প্রকাশ্যেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রায় রেমিটেন্সের অর্থ পরিশোধ, বৈধ পথে পাঠানোর খরচ বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয় রেমিটেন্স কমে যাওয়ার কারণ কিনা তা খতিয়ে দেখতে পৃথক একটি কমিটি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধে বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়।
এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোর কর্মকর্তারা সে দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন, তাদেরকে হুন্ডির পরিবর্তে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহ দিচ্ছেন। যেসব এজেন্ট প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে পাঠাচ্ছেন তাদের তালিকা সে দেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও মন্ত্রণালয়গুলোর কাছে পাঠাচ্ছেন ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। এর ভিত্তিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো অভিযান চালাচ্ছে। প্রবাসীরা যাতে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারে সে বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ নেয়ার জন্যও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে দূতাবাসগুলো।
সূত্র জানায়, প্রবাসীরা হুন্ডিতে কেন উৎসাহিত হচ্ছে তা বের করতে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি দল। তারা প্রাথমিকভাবে কিছু বিষয় মাথায় রেখে এগিয়ে যাচ্ছেন। যার মধ্যে কাছাকাছি দূরত্বে ব্যাংকিং সেবা না থাকা, কমিশন বেশি নেয়া এবং সময়সাপেক্ষ হওয়ার মতো বিষয়গুলো রয়েছে। এজন্য সহজে ও কম খরচে কিভাবে প্রবাসীরা অর্থ পাঠাতে পারেন সেটিও খতিয়ে দেখবে প্রতিনিধি দলটি। জানা যায়, প্রতিনিধি দলটি তিন দেশ ঘুরে এসে একটি প্রতিবেদন দাখিল করবে এবং সেখানে হুন্ডি প্রতিরোধে সুপারিশ থাকবে।
সম্পাদনা: সজিব ঘোষ