
লন্ডন: পেশাদার ফুটবলাররা তাদের খেলোয়াড়ি জীবনে অসংখ্যবার হেড দিয়ে বল ঠেকান এবং গোল করেন। তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে মস্তিস্কের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির আশংকা আছে বলে দাবি করেছেন গবেষকরা। যুক্তরাজ্যের একদল গবেষকের গবেষণার বিষয়টি উঠে আসে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন এবং কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে গবেষণার জন্য পাঁচজন পেশাদার এবং একজন শৌখিন ফুটবলারের মস্তিষ্ক পরীক্ষা করে দেখেন। এরা গড়ে প্রায় ২৬ বছর ধরে ফুটবল খেলেছেন। অবশ্য গবেষণার আগে থেকেই বিভিন্ন ফুটবলারের উদাহরণ দিয়ে বলা হচ্ছিল, যারা বেশি হেড দিয়ে খেলেন তাদের শেষ জীবনে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা বিনোদনের জন্য মাঝে মধ্যে ফুটবল খেলেন, তাদের ক্ষেত্রে এটা সমস্যা নয়। কেবল পেশাদার ফুটবলাররা এরকম ঝুঁকির মধ্যে আছেন। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে ওয়েস্ট ব্রম ক্লাবের সাবেক স্ট্রাইকার জেফ অ্যাস্টেলের কথা বলা যেতে পারে। মাত্র ৫৯ বছর বয়সে ডিমেনশিয়ায় ভুগে মারা যান তিনি। বাবার এই রোগ যে পেশাদার ফুটবল খেলার কারণেই হয়েছিল সেটা স্পষ্ট বলে উল্লেখ করেন তার মেয়ে ডন অ্যাস্টেল।
২০০২ সালে তার মৃত্যুর পর করা তদন্তে দেখা গিয়েছিল, ফুটবলার জীবনে তিনি তার মাথা দিয়ে যেভাবে বার বার শক্ত চামড়ার বল খেলেছেন, সেটা তার মস্তিষ্কের ক্ষতি করেছিল। তখন এই প্রতিবেদনটিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলে বলে অভিযোগ ওঠে। ডন অ্যাস্টেল বলেন, ‘ফুটবল জগত তখন এটা গোপন করার চেষ্টা করছিল যে এই খেলাটাও প্রাণঘাতী হতে পারে।’
যে ৬ জন ফুটবলারকে নিয়ে গবেষকরা পরীক্ষা করেন তাদের সবারই বয়স যখন ষাটের কোঠায়, তখন তারা ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। মৃত্যুর পর পোস্ট মর্টেম করে বিজ্ঞানীরা এদের মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়েছিল বলে ইঙ্গিত পেয়েছেন। মস্তিষ্কের এরকম কন্ডিশনকে বলে ক্রনিক ট্রম্যাটিক এনসেফালোপ্যাথি। এর ফলে স্মৃতি মুছে যাওয়া, বিষন্নতা এব ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হয় মানুষ।
ইউনিভার্সিটি কলেজ, লন্ডনের অধ্যাপক হিউ মরিস বলেন, ‘আমরা যখন এদের মস্তিষ্ক পরীক্ষা করে দেখি, তখন সেখানে এমন সব পরিবর্তন লক্ষ্য করি, যা বক্সারদের মস্তিষ্কে দেখা যায়। সুতরাং এই প্রথম আমরা এমন প্রমাণ পাচ্ছি যে, এই ফুটবলাররা তাদের শুরুর জীবনে এমন কিছু করেছেন যার কারণে তাদের মস্তিষ্কে প্রভাব পড়েছে এবং যা থেকে তাদের ডিমেনশিয়া হয়েছে।’
গবেষণার এই ফল বিস্তারিত পর্যালোচনা করে দেখবে বলে জানিয়েছে ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। সূত্র: বিবিসি
গ্রন্থনা: ফারহানা করিম, সম্পাদনা: জাহিদ