
ঢাকা: সরকারি সিদ্ধান্ত মতে ভর্তি পরীক্ষার নম্বরের শর্ত পূরণ না করে ১৫৩ শিক্ষার্থীকে ভর্তি করায় ১০ বেসরকারি মেডিকেল কলেজকে ১ কোটি টাকা করে জরিমানা করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। জরিমানার এই অর্থের অর্ধেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এই ১০ বেসরকারি মেডিক্যাল হল- শমরিতা মেডিকেল কলেজ, সিটি মেডিকেল কলেজ, নাইটিঙ্গেল মেডিকেল কলেজ, জয়নুল হক শিকদার মেডিকেল কলেজ, ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, ইস্ট-ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ, তাইরুন নেছা মেডিকেল কলেজ, আইচি মেডিকেল কলেজ, কেয়ার মেডিকেল কলেজ ও আশিয়ান মেডিকেল কলেজ।
আগামী ১০দিনের মধ্যে এই জরিমানার অর্থের অর্ধেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এবং বাকি অর্ধেক কিডনি ফাউন্ডেশন ও লিভার ফাউন্ডেশনকে দিতে বলা হয়েছে। সেই সাথে জরিমানার টাকা পরিশোধ সাপেক্ষে ওই ১৫৩ শিক্ষার্থীকে মানবিক বিবেচনায় প্রথম পর্বের (ফার্স্ট প্রফেশনাল এক্সামিনেশেন) রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন আদালত।
একইসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এই অর্থ দ্বারা একটি এফডিআর ফান্ড গঠন করতে বলা হয়েছে। ওই ফান্ড থেকে যে লভ্যাংশ আসবে তা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গরীব ও মেধাবি শিক্ষার্থীদেরকে বৃত্তি প্রদান করতে বলা হয়েছে।
ওইসব বেসরকারি মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষদের দেওয়া ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হওয়ায় রোববার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মাহবুবে আলম, ও এএফএম মেজবাহ উদ্দিন।
অপরদিকে ১৫৩ শিক্ষার্থীর পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার ও এজে মোহাম্মদ আলী।
এর আগে গত ১০ আগস্ট ওই ১০ বেসরকারি মেডিকেলের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না এবং কেন তাদের জরিমানা করা হবে না- তা জানতে চান আপিল বিভাগ। সেই সাথে ওইসব বেসরকারি মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষকে ২১ আগস্টের মধ্যে এর ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছিল আপিল বিভাগ।
জান গেছে, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস/বিডিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ নম্বর প্রাপ্তির বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। একইরকম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও সিদ্ধান্ত দিয়েছিল।
তবে ওই শর্ত পূরণ না হওয়ার পরও ১৫৩ শিক্ষার্থী ভর্তি করে ১০টি মেডিকেল কলেজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই ১০টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া ১৫৩ শিক্ষার্থীর প্রথম পর্বের (ফার্স্ট প্রফেশনাল এক্সামিনেশেন) রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র আটকে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওই সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৫৩ জন হাইকোর্টে রিট করেন। ওই রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে চলতি বছরের ১৩ জুন হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুলসহ অন্তবর্তীকালীন আদেশ দেন। হাইকোর্ট রিট আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র দিতে বলে। ওই আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লিভ টু আপিল করে। সেই লিভ টু আপিলের শুনানি শেষে রোববার আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।
প্রতিবেদন: ফজলুল হক, সম্পাদনা: মাহতাব শফি/সাইফুল ইসলাম