
ঢাকা: ১৪৪ রানে ইংল্যান্ডের ৮ উইকেট তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপরই মূলত: প্রথমবারের মতো ক্রিকেটের জনক দেশটির বিরুদ্ধে লিড নেয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে টাইগাররা। কিন্তু স্বাগতিকদের সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায় ক্রিস ওকস-আদিল রশীদ জুঁটির কাছে। তাদের সাবলীল আর অভিজ্ঞ ব্যাটিংয়ের কারনে উল্টো পিছিয়ে পড়তে হয়েছে মুশফিক-সাকিবদের। ২৪ রানের লিড নিয়েই প্রথম ইনিংসে মাঠ ছেড়েছে ইংলিশরা। বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৪৪ রান সংগ্রহ করেছে তারা। নবম উইকেট জুঁটিতে ৯৯ রানের দারুন এক পার্টনারশীপ উপহার দিয়েছে ওকস-আদিল রশীদ।
সিরিজের দ্বিতীয় শেষ টেস্টে শুক্রবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ২২০ রানে গুঁটিয়ে গিয়েছিল টাইগারদের ইনিংস। যদিও ৩০০ রানের কোটা পাড় করার সুযোগ ছিল তাদের সামনে। কিন্তু অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে সেটা আর হয়নি। স্বাগতিকদের মিডল আর টেল এন্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার কারনে ২২০ রানেই সন্তুষ্ঠ থাকতে হয়। প্রথম দিনের শেষ শেসনে ব্যাট করতে নেমে সুবিধা করতে পারেনি সফরকারীরাও। বৃষ্টি বিঘিœত ম্যাচে ৫০ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়ে বেকায়দায় পড়ে যায় অ্যালিষ্টার কুক বাহিনী।
আজ শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো খেলা শুরু হয়েছিল নির্ধারীত সময়ের আধ ঘন্টা আগে। প্রথম দিনের খেলতে না পারার সময়টা পুষিয়ে নিতেই ৩০ মিনিট আগে খেলা শুরুর সিদ্ধান্ত নেন ম্যাচ কমিশনার। ব্যাট হাতে মাঠে নামেন আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান জো রুট (১৫*) ও মঈন আলী (২*)। প্রথম দিনেই ইংলিশদের দুই উইকেট তুলে নেয়া মেহেদী হাসান মিরাজ দিনের দ্বিতীয় ওভারেই আবারো আঘাত হানেন। সাজঘরে ফেরান মঈন আলীকে। নামের পাশে ১০ রান জমা করতেই মিরাজ ষ্ট্যাম্প উড়িয়ে দেন এ টপ অর্ডারের।
এরপর নিয়মিত বিরতীতে উইকেট হারাতে থাকে সফরকারীরা। মিরাজ-সাকিব-তাইজুলদের সামনে নিজেদের দাঁড় করাতেই পারছিল না ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। দ্রুত উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া ইংল্যান্ডকে টেনে উঠানোর চেষ্টা করছিলেন জো রুট ও জনি বেয়ারস্টো। এই জুটি কিছুটা সাবধানী হয়ে ব্যাট চালাতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে রানের চাকা সচল রাখার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আবারো মিরাজ ধামাকায় উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। এবার তার শিকার বেয়ারস্টো। নামের পাশে ২৪ রান জমা করার পর মিরাজের ঘূর্ণী বলের ফাঁদে পড়েন তিনি। অভিষেক টেস্টে আলো ছড়ানো মেহেদী হাসান মিরাজ উজ্জ্বলতা ছড়িয়েছেন মিরপুরেও। চট্টগ্রাম টেস্টের পর ঢাকাতেও ৫ উইকেট পেয়েছেন এই স্পিনার। জাফর আনসারিকে শুভাগত হোমের ক্যাচ বানিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো ৫ উইকেটের ঘর পূরণ করলেন মেহেদী।
আশার আলো হয়ে জ্বলে ছিলেন জো রুট। ইংল্যান্ডের ‘শেষ সম্বল’ হিসেবে ব্যাটিং করে অন্তত একটা প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন তিনি। হাফসেঞ্চু্রওি পূরণ করলেন, যদিও এগোতে পারলেন না বেশি দূর। তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে বোকা বনে গিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেন ৫৬ রান করে। সফরকারীদের স্কোর বোর্ডে তখন জমা ৮ উইকেটে ১৪৪ রান! তখনই প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লিড নেয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে টাইগার সমর্থকরা।
কিন্তু নবম উইকেট জুঁটিতে ক্রিস ওকস ও আদিল রশিদ যে এতোটা ভাবিয়ে তুলবে স্বাগতিকদের, সেটা কে-ই বা জানতো। ঠান্ডা মাথায় শাষন করতে শুরু করেন মিরাজ-সাকিবদের। এ জুঁটি ধীরে ধীরে নিজেদের স্কোর বোর্ডটাকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলেন। ৯৯ রানের পার্টনারশীপ উপহার দিয়ে দলকে নিরাপত স্থানে নিয়ে যান। ব্যাক্তিগত ৪৬ রানে মিরাজের শিকারে পরিনত হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ওকস। ১২২ বলে চার বাউন্ডারি দিয়ে নিজের ইনিংস সাজান এ টেল এন্ডার। শেষ পর্যন্ত আদিল রশীদ ছিলেন হার না মানা। ৪৪ রানে অপরাজিত থাকা এ ব্যাটসম্যান ক্রিজে থাকলেও শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিনকে আউট করেন তাইজুল। ২৪৪ রানে থেমে যায় ইংল্যান্ডের ইনিংস। ২৪ রানের লিড পায় তারা।
বাংলাদেশের হয়ে মিরাজ ৬টি, তাইজুল তিনটি ও সাকিব একটি করে উইকেট পান।
প্রতিবেদক: কবিরুল ইসলাম, সম্পাদনা: জাহিদ