
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ:
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ‘থার্টি ফার্স্ট নাইটে’ দুই যাত্রা শিল্পী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আর এ বিষয়টি ৫০ হাজার টাকা দিয়ে মিমাংসা করেছেন শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শিকদার মোশারফ হোসেন সোনা। গত ২৯ ডিসেম্বর শৈলকুপা নতুন ব্রীজের নিচে নদীর নির্জন চরে ‘অশ্লীল যাত্রা ও জুয়ার আসর’ উদ্বোধন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল হাই। সেখানে উপজেলা ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের এমপি পন্থী নেতা-কর্মীরা জুয়া আর যাত্রার আয়োজন করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনের মতো শনিবার সন্ধ্যা থেকেই মাগুরা থেকে আসা যাত্রাপালা ও জুয়ার আসর শুরু হয়। রাত আনুমানিক ১১টার দিকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা কর্নেল, রিংকু, যুবলীগের যাদব, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহিদ, কাউসারসহ বেশ কয়েকজন মদ্যপ অবস্থায় যাত্রার আসরে প্রবেশ করে। একপর্যায়ে যাত্রার আসর থেকে তারা গ্রীণরুমে ঢুকে পড়ে এবং সেখান থেকে দুইজন নারী যাত্রাশিল্পীকে অপহরণ করে পাশের বাঁশবাগানে নিয়ে জোটবদ্ধ গণধর্ষণ করে। একপর্যায়ে তারা সঙ্গাহীন হলে সেই বাগানেই ফেলে চলে যায় ধর্ষকরা।
প্রায় দুই ঘন্টা পর সহকর্মীরা তাদের উদ্ধার করে থানার পাশের জোসনা বিউটি পার্লারের ভেতরে নিয়ে যায়। সেখানে শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক রনি বিশ্বাসকে ডেকে এনে চিকিৎসা করানো হয়। এই ঘটনার পর ভোর রাতে যাত্রা দলটি চলে যেতে চাইলে মেলার আয়োজক ইমরান হোসাইন, মনিরুজ্জামান সুমনসহ বেশ কয়েকজন অস্ত্রের মুখে তাদের আটকে রাখে। একপর্যায়ে হলমার্কেটে বসে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শিকদার মোশারফ হোসেন সোনার মধ্যস্ততায় ৫০ হাজার টাকায় বিষয়টি মিমাংসা করতে বাধ্য হন যাত্রা দলের শিল্পীরা। বর্তমানে যাত্রা শিল্পীরা আতঙ্কে রয়েছেন। ক্ষোভ চেপে রেখেই যাত্রাপালা চালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
গণধর্ষণের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে আয়োজক কমিটির সভাপতি দেলোয়ার কবির নিউজনেক্সটবিডি ডটকম’কে বলেন, ‘থার্টি ফার্স্ট নাইটে সবাই একটু আধটু মজা করে। কিন্তু যাত্রাপালায় কোন ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি।’
শৈলকুপা থানার ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘লোকমুখে গণধর্ষণের কথা তিনি শুনেছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে থানায় কেউ অভিযোগ করতে আসেনি। অভিযোগ দিলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
শৈলকুপার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিদারুল আলম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত গণধর্ষণের কোন অভিযোগ তিনি পাননি। তবে নদীর চরে একটি যাত্রাপালা আয়োজনের খবর তিনি শুনেছেন। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ আয়োজনের কোন অনুমতি দেয়া হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, উদ্বোধনের শুরু থেকেই যাত্রাপালা অনুষ্ঠানের আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন এলাকার সাধারণ মানুষসহ অন্তত ৯টি ইসলামী সংগঠন। তাদের আপত্তির মুখে এখনও জেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদ যাত্রাপালা চালানোর অনুমতি দেয়নি। কিন্তু সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা মুক্তার আহমেদ মৃধাকে পিটিয়ে সমালোচিত হওয়া সংসদ সদস্য আব্দুল হাইয়ের প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই গত পাঁচদিন ধরে যাত্রাপালার নামে অশ্লীল নৃত্য ও জুয়ার আসর চালিয়ে যাচ্ছেন তার ক্যাডাররা।
সম্পাদনা: ইয়াসিন