৬৩ বছর আগের চিঠি!

ডেস্ক: বিশ্ববাসীর মানবিক আবেদন উপেক্ষা করে নিজ দেশের এক বিজ্ঞানী দম্পতিকে ফাঁসি দিয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্র। আণবিক বোমা তৈরির গোপন ফর্মুলা চুরি করে তা সোভিয়েত ইউনিয়নকে দেয়ার অভিযোগে দেশদ্রোহের দায়ে বিজ্ঞানী জুলিয়াস রোজেনবার্গ ও তার স্ত্রী এথেল রোজেনবার্গকে ইলেকট্রিক চেয়ারে বসিয়ে হত্যা করা হয়। ১৯৫৩ সালের ১৯ জুন তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। জীবনের শেষ দিনে এথেল রোজেনবার্গ তার দুই পুত্রকে একটি চিঠি লেখেন-
আমার প্রিয় লক্ষ্মীছেলেরা,
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে হচ্ছিল আমরা সবাই একসঙ্গেই আছি। কিন্তু জানি এ মুহূর্তে তা অসম্ভব, কল্পনাতীত। আমি আজ পর্যন্ত যত কিছু জেনেছি, সব তোমাদের বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তোমাদের কাছে আর বেশি কিছু লেখার সুযোগই নেই।
খুব ছোট করে লিখছি— জীবনের নানা অভিজ্ঞতা, যা তোমাদের আজীবন শিক্ষা দিয়ে যাবে, ঠিক যেমন আমাকে দিয়েছে। প্রথমে তোমরা হয়তো আমাদের জন্য ভীষণ কষ্ট পাবে, তবে ভেবো না যে এ কষ্ট তোমরা একাই পাচ্ছ। আমরা নিজেদের সান্ত্বনা দিচ্ছি এবং তোমাদের জন্যও তাই। অবশেষে হয়তো তোমরা একসময় বিশ্বাস করবে যে, মানুষের জীবনে বেঁচে থাকা কতটা মূল্যবান।
তোমরা এখন পর্যন্ত জেনে রাখো, ধীরে ধীরে আমাদের অস্তিত্ব বিলুপ্তি ঘটলেও জানি যে, আমাদের দোষী সাব্যস্ত করায় মূলত ঘাতকদের পরাজয়ই ঘটেছে! তোমরা জীবনের নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে থেকে অবশ্যই শিক্ষা পাবে যে, খারাপ কাজের বেড়াজালে ভালো কাজের সমৃদ্ধি অনিশ্চিত। স্বাধীনতা লাভ এবং জীবনকে ঐশ্বর্যময় ও উপভোগ্য করে তোলার পাশাপাশি অনেক কিছুই তুমি কিনে ভোগ করতে পারবে না।
জেনে রাখো— আমরা শান্তভাবে ও গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করেছি যে, সভ্যতার উত্কর্ষ এখনো সাধিত হয়নি; যেখানে একজন মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অন্য আরেকজনকে জীবন দিতে হচ্ছে এবং পূর্বপুরুষদের দেয়া শিক্ষার ওপর নির্ভরশীল হয়ে জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
খুব ইচ্ছে ছিল বাকি জীবনটা তোমাদের সঙ্গে হেসে-খেলে কাটাব, তুষ্টভাবে বেঁচে থাকব। শেষ সময়ে তোমাদের বাবাকে কয়েক ঘণ্টার জন্য পাশে পেয়েছি, তিনি হৃদয় থেকে তোমাদের জন্য ভালোবাসা জানাচ্ছেন। সবসময় মনে রাখবে, আমরা নিষ্পাপ ছিলাম এবং আমাদের বিবেক নির্ভুল ছিল। তোমাদের জন্য বুকে জড়িয়ে ধরে আদর আর রইল অনেক অনেক চুমু।
ইতি
তোমাদের বাবা ও মা
জুলিয়াস ও এথেল
নিউজনেক্সটবিডি ডটকম/এসকে/টিএস