
ডেস্ক: বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক, কলাম লেখক, মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নির্মল কুমার সেন গুপ্ত (নির্মল সেন) এর ৮৬ তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৩০ সালের ৩ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার দিঘিরপাড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এ উপলক্ষে বেলা ১১টায় নির্মল সেন জন্মদিন উদযাপন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে কেক কাটা ও আলোচনা সভার আয়োজন করে।
নির্মল সেনের পিতার নাম সুরেন্দ্র নাথ সেন গুপ্ত ও মা লাবণ্য প্রভা সেন গুপ্ত। সুরেন্দ্র নাথ গুপ্ত কোটালীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনের গণিত শিক্ষক ছিলেন। পিতার কর্মস্থলেই চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতি এম ই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন নির্মল সেন। এরপর তিনি বরিশাল জেলার বি এম একাডেমী-তে ভর্তি হন এবং এখান থেকে ১৯৪৪ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে প্রবেশিকা (এসএসসি) পাশ করেন। এরপর বরিশালের বিএম কলেজ থেকে ১৯৪৬ সালে আইএসসি পাস করে সেখানেই বিএসসি কোর্সে ভর্তি হন। ছাত্রাবস্থায় রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে গ্রেফতার হয়ে জেল থেকে বিএসসি পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হন। পরবর্তীতে ১৯৬১ সালে জেল থেকে বিএ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হন। এরপর ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।
১৯৬১ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক পদে যোগদানের মাধ্যমে সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। ১৯৬২ সালে তিনি দৈনিক জেহাদ এবং ১৯৬৪ সালে দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকায় কাজ করেন। পরবর্তীকালে প্রেস ট্রাস্টের অধীনস্থ দৈনিক বাংলা পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন এবং পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এর সাথেই জড়িত ছিলেন ওতপ্রোতভাবে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগে অতিথি শিক্ষক হিসেবেও পড়িয়েছেন কিছু দিন।
মহাত্মা গান্ধীর ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনে অংশ নিয়ে স্কুল গেটে ১৬ দিন ধর্মঘট করার মাধ্যমে নির্মল সেনের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। সময়টা ছিল ১৯৪২ সাল, তিনি ছিলেন নবম শ্রেনীর ছাত্র। ১৯৪৪ সালে রেভ্যুলিউশনারি সোশ্যালিস্ট পার্টিতে যোগদানের মাধ্যমে তার সরাসরি রাজনৈতিক সক্রিয়তা শুরু হয়।
শৈশব থেকে লেখালেখির সাথে যুক্ত থাকলেও স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এদেশের সমকালীন সংঘাতপূর্ণ রাজনীতির প্রক্ষিতে তৎকালীন দৈনিক বাংলায় লেখা ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’ নামক একটি উপ-সম্পাদকীয় তাকে লেখক হিসেবে পরিচিতি দান করে। ৮ম শ্রেণিতে পড়ার সময় নিয়মিত লিখতেন ‘কমরেড’ পত্রিকায়, যেটি হাতে লিখে প্রকাশিত হতো। নির্মল সেন মূলত: কলাম লেখক ছিলেন। তাছাড়াও তিনি বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ এবং ভ্রমণকাহিনী লিখেছেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘মানুষ, সমাজ ও রাষ্ট্র’, ‘বার্লিন থেকে মস্কো’, ‘পূর্ব বঙ্গ পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ’, ‘মা জন্মভূমি’, ‘লেনিন থেকে গর্বাচেভ’, ‘আমার জবানবন্দী’, ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’, ‘আমার জীবনে ’৭১-এর যুদ্ধ’ ইত্যাদি।
২০০৩ সালে ব্রেইনস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার দীঘিরগ্রামে নিজ বাড়িতে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। ২০১২ সালে ২৩ ডিসেম্বর সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়ার পরদিন তাকে ঢাকায় এনে ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার ফুসফুসের ইনফেকশন রক্তের ভেতর দিয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ায় (সেপটিসেমিয়া) ২৬ ডিসেম্বর থেকে তাকে লাইফ সাপোর্ট-এ রাখা হয়। লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থাতেই ২০১৩ সালের ৮ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬ টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
নিউজনেক্সটবিডিডটকম/এসকেএস